চারুচন্দ্র সান্যাল, ডাঃ (২৩.৭.১৮৯৭ – ১২.৭.১৯৮০) বক্তারপুর-পাবনা। জয়চন্দ্ৰ। পিতার কর্মস্থল জলপাইগুড়িতে জন্ম। খ্যাতনামা চিকিৎসক, রাজনীতিজ্ঞ, সমাজবিজ্ঞানী ও লোকসংস্কৃতিবিদ। এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে তার ‘দি টোটোজ’ প্ৰবন্ধটি প্রকাশিত হবার পর বিশ্বের এই ক্ষুদ্রতম জনগোষ্ঠীর কথা সভ্যজগৎ জানতে পারে। উত্তর বঙ্গে লোকসংস্কৃতিচর্চার তিনি জনক। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল থেকে ১৯১৪ খ্রী. ম্যাট্রিক, কলিকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএস-সি ও ১৯১৮ খ্রী. প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে শারীরবিজ্ঞানে প্ৰথম স্থান অধিকার করে বিএস-সি পাশ করেন। গান্ধীবাদী শ্বশুর শ্যামসুন্দর চক্রবর্তীর প্রভাবে ডাক্তারী পরীক্ষা অসমাপ্ত রেখে আইন অমান্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন ও এক মাসের কারাদণ্ড ভোগ করেন। ১৯৩০ খ্ৰী ছাত্ৰ সম্মেলনীতে রাজদ্রোহমূলক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর জেলে থাকেন। এ সময়ে কমিউনিজমে আকৃষ্ট হন এবং ‘কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো’র বাংলা অনুবাদ ‘সাম্যবাদীর আদর্শ’ বইটি লেখেন। ১৯৩২ খ্ৰী লবণ আইন ভঙ্গ আন্দোলনে ও ১৯৪২ খ্রী. ‘ভারত-ছাড়’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাদণ্ডিত হয়েছেন। ডাক্তারি পড়া-কালে চিকিৎসা-বিষয়ে তার লিখিত ‘কালাজ্বর চিকিৎসায় কুইনাইনের প্রয়োগ’ (Further Possibilities of Quinine Study) পুস্তকটি সেকালে বেশ নাম করেছিল। এ ছাড়া ‘intervenus iodine in Septic Fevers’, ‘Bengal Dietary’, ‘Kalazar’ প্রভৃতি প্রবন্ধ Calcutta Medical Review পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ডাক্তারী পড়তে পড়তেই তিনি জাতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান বিদ্যালয়ের শারীর-বিজ্ঞানের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং সে সময়ে তার লেখা ‘Laboratory Essentials of Physiological Chemistry’ বইটি পাঠ্যরূপে নির্বাচিত হয়। জলপাইগুড়ির আদিবাসীদের সম্পর্কে তার অপর কয়েকখানি বই: ‘Rajbansis of North Bengal’ (১৯৬৮ খ্রী রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত), ‘The Meches and the Totos of North Bengal’, ‘The Limbus’ প্রভৃতি। ১৯৩৮–১৯৬২ খ্রী. জলপাইগুড়ি জেলায় খাদ্যসমস্যা সম্বন্ধে ‘জনমত’ পত্রিকায় তালিকাভিত্তিক সুচিন্তিত আলোচনা করেছেন। জিওগ্রাফিক্যাল ম্যাগাজিনে প্ৰকাশিত হয়েছে। তিস্তা নদী সম্পর্কে তার বৈজ্ঞানিক প্ৰবন্ধ। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় গঠনে তার প্রচেষ্টা এবং শিক্ষা, ক্রীড়া প্রভূতির উন্নতি বিষয়ে তার উদ্যম উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ খ্ৰী. উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিলিট. সম্মানে ভূষিত করে। উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি কয়েকটি চা কোম্পানীর ডিরেক্টর হন, কিন্তু সাবেকি শ্রমিক শোষণনীতির বিরোধী ছিলেন। ১৯৪২ খ্রী. টি প্ল্যানটার্স অ্যাসোসিয়েশন-এ চা-শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিগুলি সম্পর্কে তার প্রদত্ত পরিকল্পনা পরবর্তী কালে অনেকাংশে গৃহীত হয়েছিল। তিনি কংগ্রেস নেতা ও বিধান পরিষদের সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন ‘জনমত’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। কোচবিহার রাজ্যকে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভূক্ত করার ব্যাপারে তার যথেষ্ট অবদান আছে।
পূর্ববর্তী:
« চারুচন্দ্র রায়
« চারুচন্দ্র রায়
পরবর্তী:
চারুচন্দ্ৰ চক্রবর্তী, জরাসন্ধ »
চারুচন্দ্ৰ চক্রবর্তী, জরাসন্ধ »
Leave a Reply