চারুচন্দ্র রায়১ (১৮৭০ – ১৯৪৫) চন্দননগরl দয়ালচাঁদ। চন্দননগর গড়বাটি বিদ্যালয় থেকে এন্ট্রান্স, হুগলী কলেজ থেকে এফ.এ ও লক্ষ্মেী থেকে বি-এ, এবং এম-এ পাশ করেন। ১৮৯৩ খ্রী. চন্দননগরে ‘সেন্ট মেরিজ ইনস্টিটিউশন’ (পরবর্তী ড়ুপ্লে কলেজ)-এর ইংরেজীর অধ্যাপকরূপে কর্মজীবন শুরু। পরে প্রতিষ্ঠানের সাব-ডিরেক্টর হন। এই আদর্শ শিক্ষাবিদ চন্দননগরে বিপ্লবচিন্তারও অধিনায়ক ছিলেন। তার বাসভবনেই অগ্নিযুগের কর্মক্ষেত্র সুচিত হয়। সখারাম গনেশ দেউস্কর, অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ প্রমুখ বিপ্লবীদের গোপন-বৈঠক, স্বাস্থ্যচর্চা, লাঠি ও ছোরা খেলা, মুষ্টিযুদ্ধ, বন্দুক ছোড়া, সমাজসেবা এবং ইতিহাস, দর্শন ও বিপ্লবমূলক পুস্তকাদি পাঠ ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি ছাত্র ও যুবসম্প্রদায়কে উদ্দীপিত করেন। কানাইলাল দত্ত, উপেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাসবিহারী বসু, শ্ৰীশচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ বিপ্লবীরা তার শিষ্য। তার প্রভাব, সংগঠনশক্তি এবং সক্রিয়তার কারণে ইংরাজ সরকার আলিপুর বোমা মামলায় তাকে সংশ্লিষ্ট করে ১৯.৬.১৯০৮ খ্রী. গ্রেপ্তার করে। ছয় মাস কারাগারে থাকার পর প্রমাণাভাবে তিনি মুক্তি পান এবং ড়ুপ্লে কলেজে অধ্যাপনা করতে থাকেন। ইতিমধ্যে ফরাসী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের কলেজ-বিভাগ বন্ধ করে শুধু বিদ্যালয়-বিভাগ চালাচ্ছিলেন। ১৯২০ খ্রী তিনি ঐ বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্ৰহণ করে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ‘প্ৰজা সমিতি’ নামে দল গঠন করে তিনি নির্বাচনে চন্দননগরের সকল সভার সমস্ত আসন অধিকার করেন এবং শহরের নানা জনহিতকর কাজে ব্ৰতী হন। ১৯২৮ খ্ৰী. চন্দননগরের মেয়র ও পণ্ডিচেরীর ‘কঁসেই জেনারেল’ নির্বাচিত হন। ১৯৩১ খ্রী. তারই প্রচেষ্টায় ড়ুপ্লে কলেজের কলেজ বিভাগটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ইংরাজী, ফরাসী ও বাংলাভাষায় পাণ্ডিত্যপূৰ্ণ বহু প্ৰবন্ধ এবং ‘কালনিদ্ৰা’, ‘কমলাকান্তের পত্র’, ‘শরৎ সমালোচনা-শেষ প্রশ্ন’ প্রভৃতি কয়েকটি গ্ৰন্থ রচনা করেছেন।
চারুচন্দ্র রায়২ (১৯১০ – জুলাই ১৯৬৪) কুঁয়ারপুর-ফরিদপুর। সুরেন্দ্রনাথ। সরকারী কর্মচারী পিতার কর্মক্ষেত্র ঢাকায় থাকতেন। অনুশীলন সমিতির ধনেশ ভট্টাচার্যের সংস্পর্শে এসে বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হন। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে বিকম পাশ করে পূর্ণ সময় বৈপ্লবিক কমে আত্মনিয়োগ করেন। বোমা তৈরি, অস্ত্ৰ চালানো এবং অস্ত্ৰ মেরামতি শিক্ষা করেন। ১৯৩০ খ্ৰী. চট্টগ্রামের বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের পর সারা বাঙলায় ধরপাকড় শুরু হলে তিনি আত্মগোপন করে জেলায় জেলায় বৈপ্লবিক সংগঠন ও বিপ্লবী সামরিক ইউনিট গড়ে তোলেন। ১৯৩১ খ্রী. পুলিস তার বাড়ি ঘেরাও করে আহত অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করে। জেলের ভিতর তার উপর নির্মম অত্যাচার করা হয়। ১৯৩৮ খ্রী. ছাড়া পান। রামগড়ের ঐতিহাসিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে সেখানে মার্ক্সীয় আদর্শে যে আরএসপি, দল গড়ে ওঠে তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্ৰহণ করেন। ১৯৩৯ খ্রী. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে বহু বিপ্লবী নেতার সঙ্গে তিনিও কারারুদ্ধ হন। মুক্তিলাভ করেন খণ্ড-বিখণ্ডিত ভারতবর্ষে। আবাসভূমি পূর্ববাংলা তখন পূর্ব-পাকিস্তানে পরিণত হয়েছে। ছিন্নমূল উদ্বাস্তু হিসাবে কলিকাতায় আসেন এবং নানা কারণে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন।
Leave a Reply