চন্দ্ৰনাথ বসু১ (৩১.৮.১৮৪৪ – ১৯/২০.৬.১৯১০) কৈকালা-হুগলী। সীতানাথ। কলিকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারী ও প্রেসিডেন্সী কলেজের ছাত্র ছিলেন। ১৮৬০ খ্রী. এন্ট্রান্স পাশ করেন। আর্থিক অনটন ছিল, কিন্তু একটি সরকারী বৃত্তি পাওয়ায় পড়াশুনা চলে। ১৮৬৩ খ্রী. পঞ্চম স্থান অধিকার করে এফ-এ, ১৮৬৫ খ্রী. ইতিহাসে অনার্স সহ বি-এ, ১৮৬৬ খ্রী. ইতিহাসে প্রথম শ্রেণীতে প্ৰথম হয়ে এম-এ, এবং পরের বছর তিনি ও রাসবিহারী ঘোষ একসঙ্গে বি.এল. পাশ করেন। কর্মজীবনে বহুবার পেশা পরিবর্তন করেছেন : কলিকাতা হাইকোর্টের উকিল, ছ’ মাসের জন্য ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট, জয়পুর কলেজের অধ্যক্ষ, বেঙ্গল লাইব্রেরীর সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবং সবশেষে ১৮৮৭-১৯০৪ খ্রী. বাঙলা সরকারের অনুবাদক। শিক্ষাসংক্রান্ত তৎকালীন সকল আন্দোলনের সঙ্গে তার যোগ ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে জাতীয় চেতনাসঞ্চারকদের অন্যতম ছিলেন। তবে প্ৰবন্ধকার হিসাবেই তিনি সমধিক পরিচিত। ‘শকুন্তলাতত্ত্ব’, ‘সাবিত্রীতত্ত্ব’, ‘ত্রিধারা’, ‘হিন্দুত্ব’ প্রভৃতি তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ। প্ৰথম দিকের রচনাবলী ইংরেজীতে ও পরে প্রায় সবগুলিই বাংলায় লিখেছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে হিন্দুধর্মের পুনরুজ্জীবনে তার প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য। হিন্দু ধর্ম-কর্ম, সভ্যতা-সংস্কৃতি, বিশেষ করে সাহিত্য সমালোচনা সম্পর্কে ‘বঙ্গদর্শন’, ‘প্রচার’ প্রভৃতি পত্রে সুচিন্তিত প্ৰবন্ধাদি প্রকাশ করতেন।
চন্দ্রনাথ বসু২ (১৮৯৩ – ২.৬.১৯৭৯) রামদীয়া-গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর। বিশিষ্ট গান্ধীবাদী সংগঠক ও সমাজকর্মী। ১৪ বছর বয়সে আধ্যাত্মিক অন্বেষণায় দেশভ্রমণে বার হন। উত্তর-ভারত পরিক্রমাকালে বহু সাধু-সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে আসেন। তাঁদেরই একজনের নির্দেশে তিনি সেবাব্রত নিয়ে দেশে ফেরেন এবং নিজ গ্রামের এক শ্মশানে ১৯২০ খ্রী. সেবাশ্রম প্ৰতিষ্ঠা করে জনসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। বৃন্দাবনে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন। রামদীয়ায় স্কুল, শ্ৰীকৃষ্ণ কলেজ ও ১৯৪৬ খ্ৰী. একটি বালিকা বিদ্যালয়ের তিনি স্থাপয়িতা। দেশবিভাগের পর ১৯৪৮ খ্রী. থেকে ৫ বছর পাক-সরকারের কারাগারে আটক থাকেন। মুমূর্ষ অবস্থায় জেল থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলে তিনি চিকিৎসার জন্য কলিকাতায় আসেন। এ সময় ডা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ নেতারা চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাকে সারিয়ে তোলেন। পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের অনুরোধে তিনি দণ্ডকারণ্যে উদ্বাস্তুদের কল্যাণমূলক সংগঠনের কাজে সেখানে যান, কিন্তু বিশেষ সহযোগিতা না পেয়ে চলে আসেন। মেদিনীপুরের পশম গ্রামে, গ্রামবাসীদের উৎসাহে তিনি দ্বিতীয় কর্মক্ষেত্ৰ স্থাপন করেন। তৃতীয় কর্মক্ষেত্র করলেন ইহাসখালি ও রাণাঘাটে। নদীয়ার গোড়নগরে আশ্রম, বগুলায় ‘শ্ৰীকৃষ্ণ কলেজ’ ও ক্যানিং-এ ‘বঙ্কিম সরদার কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্ব-পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ গঠিত হলে মুজিবুর রহমানের আহ্বানে গোপালগঞ্জে গিয়ে সমাজসেবার কাজ আরম্ভ করেন। মুজিবুরের হত্যার মাত্র এক সপ্তাহ আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। কলিকাতায় মৃত্যু। ‘ফরিদপুরের গান্ধী’ নামে পরিচিত ছিলেন।
Leave a Reply