ক্ষুদিরাম বসু ১ (৩.১২.১৮৮৯ – ১১.৮.১৯০৮) মৌবনী, মতান্তরে হবিবপুর-মেদিনীপুর। ত্ৰৈলোক্যনাথ। অল্পবয়সে মাতাপিতৃহীন হয়ে জ্যেষ্ঠা ভগিনীর কাছে প্রতিপালিত হন। প্ৰথমে তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুলে ও পরে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষালাভ করেন। ছাত্রাবস্থায় সত্যেন্দ্ৰনাথ বসুর সংস্পর্শে যুগান্তর দলে যোগ দেন (১৯০২) এবং দিদির বাড়ি ছেড়ে বিপ্লবী কাজে মনোনিবেশ করেন। নিজ হাতে কাপড় বোনা, ব্যায়াম চর্চা, গীতা অধ্যয়ন ও দেশবিদেশের প্রখ্যাত বিপ্লবীদের জীবনী পাঠদ্বারা যে জীবনের শুরু, ক্রমে বিলাতী বয়কট, বিলাতী লবণের নৌকা ডোবানো প্রভৃতি সক্রিয় স্বদেশী আন্দোলনে তার পরিণতি। মেদিনীপুর মারাঠা কেল্লায় এক প্রদর্শনীতে বিপ্লবী পত্রিকা ‘সোনার বাংলা’ বিলির সময়ে পুলিস গ্রেপ্তার করতে গেলে পুলিসকে প্রহার করে পলায়ন করেন (১৯০৬)। পরে গ্রেপ্তার হলেও বয়স অল্প বলে মামলা প্ৰত্যাহৃত হয়। এই বছর কাঁসাই নদীর বন্যার সময়ে রণপা’র সাহায্যে উপস্থিত হয়ে ত্ৰাণকাৰ্য চালান। ১৯০৭ খ্রী. গুপ্ত সমিতির অর্থের প্রয়োজনে মেলব্যাগ লুণ্ঠন করেন। সে সময় কলিকাতার অত্যাচারী চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিষ্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য বিপ্লবী দলের সিদ্ধান্ত হয়। সরকার উক্ত সাহেবের নিরাপত্তার জন্য মজঃফরপুরে তাকে বদলী করেন। দলের আদেশে ক্ষুদিরাম ও প্ৰফুল্ল চাকী মজঃফরপুর যাত্রা করেন এবং ৩০ এপ্রিল ১৯০৮ খ্রী. রাত্রি ৮টায় ইউরোপীয় ক্লাবপ্ৰত্যাগত একটি ফিটন গাড়ীকে কিংসফোর্ডের গাড়ী মনে করে তার ওপর বোমা নিক্ষেপ করেন। গাড়ীতে দুইজন ইউরোপীয় মহিলা ছিলেন, তারা নিহত হন। এই ভুলের জন্য ক্ষুদিরাম অত্যন্ত দুঃখবোধ করেন। পরদিন তিনি গ্রেপ্তার হন ও বিচারে তার ফাঁসির আদেশ হয়। দণ্ডাদেশ শোনার সময়ে হাসিমুখে তিনি জানান যে মৃত্যুভয় তার নেই।
ক্ষুদিরাম বসু ২ (৩১.১.১২৬০ – ১৩৩৬ ব.) সাদিপুর—বর্ধমান। গোরাচাঁদ। কঠোর দারিদ্র্যের মধ্যে পড়াশুনা করে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ. পাশ করেন। কলেজে পাঠরত অবস্থায় রেভারেন্ড কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহলাভ করেন। পরে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সাহচর্য লাভ করে মেট্রোপলিটান কলেজে তৰ্কশাস্ত্রের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ক্রমশ ঐ কলেজে দৰ্শন-শাস্ত্রের অনার্স পড়াতে শুরু করেন। প্ৰথমে খ্ৰীষ্টধর্মানুরাগী ও পরে কেশবচন্দ্রের অনুরাগী হন। ১৮৯৩ খ্ৰী. কলিকাতায় সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্ৰতিষ্ঠান কলেজে পরিণত হলে অধ্যক্ষরূপে কর্মরত থাকেন। রাখীবন্ধনের দিন (১৯০৬) কলিকাতার জনসাধারণের পার্কসমূহে সভা নিষিদ্ধ করা হলে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউশন-প্রাঙ্গণে সভার আহ্বান জানিয়ে নির্ভীক স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দেন। কলেজটি বর্তমানে তার নামাঙ্কিত।
Leave a Reply