ক্ষিতীশচন্দ্র রায়চৌধুরী (১৮৯৩ – ২০.১১.১৯৭৭) ফকিরতলা–নোয়াখালি। আদি নিবাস ইদিলপুর–ফরিদপুর। ভগবানচন্দ্ৰ। স্বদেশী যুগে স্থাপিত জাতীয় বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। প্ৰথম মহাযুদ্ধের সময় যুগান্তর বিপ্লবী দলের কর্মীরা একত্রিত হয়ে যে কর্মসূচী নির্ধারণ করেন তাতে নোয়াখালি জেলার উপর ভার পড়ে হাতিয়া দ্বীপে জার্মান যুদ্ধজাহাজ থেকে অস্ত্রশস্ত্ৰ নামিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করার। এইসব কাজে অংশগ্রহণ করার ফলে তার স্কুলের পড়া অগ্রসর হয়নি। এই বিপ্লবী অভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে নরেন ঘোষচৌধুরীর নেতৃত্বে কলিকাতায় ও আশেপাশে দুঃসাহসিক বিপ্লবী কর্মোদ্যোগে তিনি যোগ দেন। নদীয়ার শিবপুর ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে যশোহরের এক গ্রামে তিন বছর অন্তরীণ থাকেন। মুক্তি পাবার পর কংগ্রেসের নেতা হিসাবে আন্দোলনে সক্রিয় হন–সেই সঙ্গে গোপন দলের ছাত্রযুবকদের সংগঠনেও সংযুক্ত থাকেন। এ সময়ে কংগ্রেসের গণ-আন্দোলনের প্রধানকমী হিসাবে ছয় মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন। ফিরে এসে স্বরাজ্য পার্টির স্থানীয় সংগঠক হন। ১৯২৪–২৭ খ্রী. তিনি কংগ্রেসের সম্পাদক, কর্মী ও নেতা এবং সাম্প্রদায়িক বিরোধের বিরুদ্ধে প্ৰধান প্ৰবক্তা, হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের সাধক, সাপ্তাহিক ‘দেশের বাণী’ পত্রিকার নির্ভীক সম্পাদক, কৃষক আন্দোলনের সহায়ক ও মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৩০ – ৩১ খ্রী. আইন অমান্য আন্দোলনে জেলানায়ক হিসাবে তিনমাস কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। চট্টগ্রাম বিদ্রোহের পর ১৯৩২ খ্ৰী. ধৃত হয়ে ১৯৩৮ খ্রী. পর্যন্ত বক্সা ও দেউলী বন্দীনিবাসে কারারুদ্ধ থাকেন। মুক্তিলাভের পরে কৃষক আন্দোলন ও কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন যুবকদলের সমর্থক হন ও পরে ঐ পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৪৬ খ্রী কলিকাতা ও নোয়াখালির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় শান্তিস্থাপনে সক্রিয় ছিলেন। দেশবিভাগের পর নোয়াখালিতেই থেকে যান এবং হিন্দু-মুসলমান জনগণের সেবায় রত থাকেন। ১৯৭০–৭১ খ্রী. পাঞ্জাবী ফৌজ ও রাজাকাররা ৭৫ বৎসর বয়স্ক এই বৃদ্ধকে মেরে ফেলার চেষ্টা করলে স্থানীয় মুসলমান জনগণের চেষ্টায় রক্ষা পান ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত আত্মগোপন করে থাকেন। ১৯৭৭ খ্রী. চিকিৎসার জন্য কলিকাতায় আনা হয়। সেখানে মৃত্যু।
পূর্ববর্তী:
« ক্ষিতীশচন্দ্র নিয়োগী
« ক্ষিতীশচন্দ্র নিয়োগী
পরবর্তী:
ক্ষিতীশপ্ৰসাদ চট্টোপাধ্যায় »
ক্ষিতীশপ্ৰসাদ চট্টোপাধ্যায় »
Leave a Reply