কৈলাসচন্দ্ৰ বসু১ (১৮২৭ – ১৮.৮.১৮৭৮) কলিকাতা। হরলাল। ওরিয়েন্টাল সেমিনারী ও হিন্দু কলেজে শিক্ষা। পিতার মৃত্যু হওয়ায় শিক্ষা অসম্পূর্ণ থাকে। কর্মজীবনে সরকারী বিভিন্ন কর্মে উন্নতিলাভ করেন ও উচ্চপদ প্ৰাপ্ত হন। বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং স্ত্রীশিক্ষায় আগ্রহী ছিলেন। বাগ্মী হিসাবে সুনাম ছিল। বেথুন সোসাইটির সদস্য, পরে সম্পাদক হন। ১৮৪৯ খ্রী. ‘লিটারারি ক্রনিকল’ পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। ‘দি বেঙ্গল রেকর্ডার’, ‘মর্নিং ক্রনিকল’, ‘সিটিজেন’, ‘ফিনিক্স’, ‘ইন্ডিয়ান ফিল্ড’, ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘বেঙ্গলী’ প্ৰভৃতি তৎকালীন সমস্ত বিখ্যাত পত্রিকার লেখক ছিলেন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য নিবন্ধ : ‘The Women of Bengal’ (১৮৫৪) এবং ‘On the Education of Females’ (১৮৫৬)। কয়েকটি রাজনৈতিক বক্তৃতাও প্রসিদ্ধিলাভ করে। ডাফ সাহেব ও মেরী কার্পেন্টার তাদের আন্দোলনে কৈলাসচন্দ্রের সাহায্য ও উপদেশে উপকৃত হন।
কৈলাসচন্দ্ৰ বসু২ স্যার, সি.আই.ই., ও.বি.ই. (১২৫৭? – ৬.১০.১৩৩৩ ব.) কলিকাতা। ১৮৭৪ খ্রী মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারী পাশ করে ক্যাম্বেল হাসপাতালের রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার হন। প্ৰধানত তারই চেষ্টায় বাঙলায় পশু-চিকিৎসা কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত এবং ট্রপিক্যাল মেডিসিন স্কুলের জন্য বহু অর্থ সংগৃহীত হয়েছিল। এ ছাড়া কলিকাতা মেডিক্যাল স্কুল, সোদপুর পিঞ্জরাপোল, কুণ্ঠ-নিবাস প্রভৃতির তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। কলিকাতা মেডিক্যাল সোসাইটির সভাপতি, ভারতীয় মেডিক্যাল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি, কলিকাতা মিউনিসিপ্যালটির কমিশনার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং অবৈতনিক ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। ‘কাইজার-ই-হিন্দ’ স্বর্ণপদক লাভ করেন। ভারতীয় ডাক্তারদের মধ্যে তিনিই প্ৰথম ‘স্যার’ উপাধি দ্বারা সম্মানিত হন।
কৈলাসচন্দ্ৰ বসু৩ (১.১১.১৮৬৪ – ২৭.১.১৯৪০) গাঘেরগ্রাম, পালং-ফরিদপুর। খ্যাতনামা পালোয়ান। পূর্ববর্তী তিনপুরুষ ধরে পালোয়ানী চর্চা ছিল, তবে বংশের কেউ কখনো ডন-কুস্তিকে পেশা হিসাবে গ্ৰহণ করেন নি। প্ৰথম শিক্ষা পিতার কাছে। পরে ঢাকায় অঘোর ঘোষের আখড়ায়। ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৮৮৫ খ্রীঃ ময়মনসিংহ শহরে পুলিস বিভাগে কাজ নেন এবং এই কাজে দুঃসাহসিক কীর্তির জন্য বহুবার পুরস্কৃত হন। ১৮৯০ খ্রী. বৈঠার আঘাতে একটি বাঘ মারায় ‘কৈলাস বাঘা’ আখ্যা পান। শ্বেতাঙ্গ পুলিস অফিসারের রূঢ় ব্যবহারের প্রতিবাদে তাকে প্রহার করে ১৯০১ খ্রী ঐ চাকরি ছাড়েন। তিনিই প্ৰথম ভদ্রবংশজাত বাঙালী যুবক যিনি প্রকাশ্যে কুস্তি প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। ১৮৮৬ খ্ৰী. পুলিসদের কুস্তি প্রতিযোগিতায় একমাত্র বাঙালী হিসাবে নেমে সকলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ান হন। ইরানের বিজয়ী মল্ল শাহ নওয়াজ ছাড়াও তিনি কানাই বৃন্দা, ঢাকার ‘হাতী’-রমজান, লক্ষ্মেীয়ের রামাদিন দীক্ষিত ও রাম অবতার সিংকেও পরাজিত করেছিলেন। বেঙ্গল হাইড্রলিক জুট প্রেসে কাজ করার সময় এক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দীর্ঘ রোগভোগের পর নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। ‘বোস ঠাকুর’ নামে পরিচিত তার অনুজও (১৫.১২.১৮৭৬ – ২০.১২.১৯৩৩) একজন খ্যাতনামা মুষ্টিযোদ্ধা ছিলেন।
Leave a Reply