ফেলিক্স কেরী (২০.১০.১৭৮৬ – ১০.১১.১৮২২) ইংলেণ্ড। উইলিয়াম কেরী। এদেশে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার পথপ্রদর্শক। তার প্রধান কীর্তি ‘বিদ্যাহারাবলী’ বাংলা ভাষায় এনসাইক্লোপীডিয়া ব্রিটানিকার পঞ্চম সংস্করণের অনুবাদ। তিনি নিজে চিকিৎসাবিদ্যায় দক্ষ ছিলেন–অস্ত্ৰোপচারে তার যথেষ্ট কৃতিত্ব ছিল। স্বভাবতই ব্যবচ্ছেদ-বিদ্যা দিয়ে ‘বিদ্যাহারাবলী’। আরম্ভ করলেন। ১৮১৯ খ্রী. থেকে চৌদ্দ মাস ধরে নভেম্বর ১৮২০ খ্ৰী. পর্যন্ত প্রত্যেক মাসের ১লা তারিখে ৪৮ পৃষ্ঠা হিসাবে ‘বিদ্যাহারাবলী’ বার হয়ে মোট ৬৩৮ পৃষ্ঠায় প্রথম গ্ৰন্থ সমাপ্ত হয়। দ্বিতীয় গ্ৰন্থ স্মৃতিশাস্ত্ৰ বিষয়েও তিনি প্রথম সংখ্যা ফেব্রুয়ারী ১৮২১ খ্ৰী. প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় সংখ্যা মার্চে বার হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। বিদেশী হয়েও দুরুহ স্মৃতিশাস্ত্রের তত্ত্ব তিনি যেভাবে বাংলাভাষায় ব্যক্তি করেছেন তা বিস্ময়কর। লেখক হিসাবে প্রকৃতপক্ষে মাত্র চার বছর বঙ্গভাষার সেবা করেছিলেন। তার অধিকাংশ রচনাই অকালমৃত্যুর জন্য অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। ৭ বছর বয়সে পিতার সঙ্গে বাংলায় আসেন। ১৪ বছর বয়সে পিতার নিকট খ্ৰীষ্টধর্মে দীক্ষা গ্ৰহণ করেন শ্ৰীরামপুরে। পিতৃ-প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানায় পিতার সহকারিরূপে কাজ করতেন। ১৮০৬ খ্রী. ডক্টর টেলর নামে এক চিকিৎসক শ্ৰীরামপুরে এলে তিনি তার কাছে চিকিৎসাবিদ্যা আয়ত্ত করতে থাকেন। ধর্মপ্রচার অপেক্ষা রোগীর রোগনিরাময়ে তার উৎসাহ বেশি ছিল। ২১ বছর বয়সে খ্ৰীষ্টধর্মপ্রচারক হিসাবে ব্ৰহ্মদেশে যাত্রা করেন। জীবনের বাকী ১৫ বছর খৃষ্টধর্মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে পারেননি। রাজনীতিচর্চা, ঐশ্বর্য আড়ম্বরের প্রতি আসক্তি, পর পর দুই স্ত্রীর মৃত্যুতে অস্থিরতা—তার জীবনে এ সময়ে ঘটেছে। তিন বছরের অধিক পূর্বভারতের অরণ্য-পর্বতে অজ্ঞাত-বাস করেছেন। পরে পিতার কাছে শ্ৰীরামপুরে ফিরে এসে সংস্কৃত, পালি ও বাংলা ভাষার চর্চা করেছিলেন। ১৮১৪ খ্রী. যে পাদরিত্ব পরিত্যাগ করে ব্ৰহ্মদেশের রাজার পররাষ্ট্র সচিব হয়েছিলেন, সে পাদরিত্ব তিনি আর গ্রহণ করেননি। ব্ৰহ্মভাষার অভিধান ও সংস্কৃত অনুবাদ সহ পালি ব্যাকরণও রচনা করেছিলেন। এতে বাংলা অনুবাদও ছিল। মৃত্যুকালে তিনি রামকমল সেনের সঙ্গে ইংরেজী ও বাংলা অভিধানের কাজ করছিলেন। ‘ব্ৰিটীন’ নামে একটি পুস্তক সমাপ্ত করেছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« ফেরাগুল শাহ
« ফেরাগুল শাহ
পরবর্তী:
ফয়যুন্নেসা চৌধুরী, নওয়াব »
ফয়যুন্নেসা চৌধুরী, নওয়াব »
Leave a Reply