উইলিয়ম কেরী / উইলিয়াম কেরি (১৭.৮.১৭৬১ – ৯.৬.১৮৩৪) পলার্সপেরি—নর্দামাটনশায়ার–ইংল্যাণ্ড। অ্যাডমণ্ড। তন্তুবায়পুত্র। ১২ বছর বয়সে জীবিকার্জনের জন্য নানা স্থানে ঘুরতে হয়। এর মধ্যে জুতো সেলাই-এর কাজও করতে হয়েছে। কোন এক সময়ে টমাস জোনসের কাছে গ্ৰীক ও ল্যাটিন ভাষা শিক্ষা করেন। সুযোগমত ইতিহাস, ভূগোল, ভ্ৰমণকাহিনী, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান প্রভৃতি বিবিধ বিষয়েও পড়াশুনা করেন। ২০ বছর বয়সে বিবাহ হয়। কয়েক বছর পর ধর্মযাজকের বৃত্তি গ্ৰহণ করেন। তার আগে হিব্রু ভাষাও শেখেন। ধর্মপ্রচারের জন্য ১১-১১-১৭৯৩ খ্রী. কলিকাতায় পৌছান। প্ৰথম সাত মাস তিনি ব্যাণ্ডেল, নদীয়া, মানিকতলা ও সুন্দরবন অঞ্চল ঘুরে বেড়ান। তার মুনশী রামরাম বসুর নিকট বাংলা শিক্ষা করেন ও তার সহায়তায় বাংলায় বাইবেল অনুবাদের কাজ চালিয়ে যান। ১৭৯৪ খ্ৰী. মালদহের মদনাবাটী নীলকুঠিতে তত্ত্বাবধায়কের চাকরি পান। এ সময়ে নিজের সুবিধার জন্য বাংলা ভাষায় একখানি সংক্ষিপ্ত শব্দকোষ ও ব্যাকরণ রচনা করেন। মদনবাটীতে কৃষক প্রজাদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে তিনি একটি কাঠের মুদ্রাযন্ত্র পেয়েছিলেন। মদনবাটীর কুঠি বন্ধ হয়ে ফেলে কেরী খিদিরপুর গ্রাম ক্রয় করে সহকারী জন ফাউণ্টেন সহ সেখানে বাস করতে থাকেন। ১৭৯৯ খ্রী. শেষার্ধে মার্শম্যান, ওয়ার্ড, গ্র্যান্ট প্রভৃতি কয়েকজন মিশনারী এদেশে দিনেমার অধিকৃত শ্ৰীরামপুরে আসেন। কেরী তখন তাঁর কষ্টার্জিত খিদিরপুরের সম্পত্তি ছেড়ে দিয়ে শ্ৰীরামপুরে এসে তাদের সঙ্গে মিলিত হন ও জানুয়ারী ১৮০০ খ্ৰী শ্ৰীীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। মার্চ মাসে হরফনির্মাণশিল্পী পঞ্চানন কর্মকার মিশন প্রেসে যোগ দিলে মিলিত চেষ্টায় ১৮.৩.১৮০০ খ্রী. ম্যাথু লিখিত সমাচারের প্রথম পাতা বাংলা ভাষায় মুদ্রিত হয়। আগস্ট ১৮০০ খ্রী. ‘মহী-রচিত মিশন সমাচার’ শ্ৰীরামপুর মিশন প্রেসে মুদ্রিত প্ৰথম গদ্য পুস্তক। এর আগে খ্ৰীষ্টমণ্ডলীর কতকগুলি গান ও রামরাম বসুর ‘হরকরা’ কবিতা মুদ্রিত হয়েছিল। টমাস ও রামরাম বসুর অনুবাদ ভিত্তি করে পণ্ডিত কেরী কর্তৃক সংশোধিত হয়ে ঐ পুস্তক মুদ্রিত হয়। এই তিনজনই প্রথম বাংলায় ছাপা পুস্তকের সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছেন। বাংলা ভাষায় প্রথম অনুবাদ-পুস্তক প্রকাশের খ্যাতির জন্য কেরী ৪-৫-১৮০১ খ্ৰী. সদ্য-প্রতিষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা ভাষার অধ্যাপক নিযুক্ত হন। কলেজে তাঁর পদোন্নতি ঘটে। ১৮৩১ খ্রী. পর্যন্ত অধ্যাপক-জীবনে তিনি বাংলা ভাষায় ব্যাকরণ, অভিধান, পাঠ্যপুস্তক ছাড়া ভারতীয় আরও অনেক ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ এবং ব্যাকরণ ও অভিধান সঙ্কলন করে প্রকাশ করেন। এ ছাড়া ভারতীয় কৃষি, ভূবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিজ্ঞান সম্বন্ধে তার গবেষণা, বাংলা হরফের সংস্কার ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষার হরফ নির্মাণ এবং ১৮২৩ খ্রী. ভারতে অ্যাগ্রি-হটিকালচারাল সোসাইটি স্থাপন তার অন্যতম কীর্তি। ১৮২৪ খ্ৰী. তিনি এই সোসাইটির সভাপতি হন এবং সরকারী অনুবাদকের পদলাভ করেন। ১৮২২ খ্রী. বাজেয়াপ্তি আইন এবং ১৮২৯ খ্রী. সতীদাহ নিবারক আইনের তিনিই অনুবাদক। ১৮০৬ খ্রী. এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য হন। ‘ফ্রেণ্ড অব ইণ্ডিয়া’ নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন। তার বাংলায় রচিত উল্লেখযোগ্য পুস্তক: ‘নিউ টেস্টামেণ্ট’, ‘বাংলা ব্যাকরণ, ‘কথোপকথন, ‘ওল্ড টেস্টামেণ্ট’, ‘ইতিহাসমালা’ ও বাংলা-ইংরেজী অভিধান। এ ছাড়া অন্যান্য রচনার সংখ্যা ৪৭ ৷ বাংলা রচনায় মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার ও রামনাথ বাচস্পতি তাকে সাহায্য করেন। তাঁর পুত্র ফেলিক্স কেরী বাংলা ভাষায় প্রথম জ্ঞানকোষ গ্ৰন্থ ‘বিদ্যাহারাবলী’ (দুই খণ্ড) রচনা করেন (১৮১৯)।
পূর্ববর্তী:
« উইলকিন্স, স্যার চার্লস
« উইলকিন্স, স্যার চার্লস
পরবর্তী:
উইলিয়ম জোনস, স্যার »
উইলিয়ম জোনস, স্যার »
Leave a Reply