কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রেভারেন্ড (২৪.৫.১৮১৩ — ১১.৫.১৮৮৫) শ্যামপুকুর-কলিকাতা মাতুলালয়ে জন্ম। জীবনকৃষ্ণ। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, খ্ৰীষ্টধর্মপ্রচারক ও বহুভাষাবিদ। পটলডাঙ্গা (হেয়ার) স্কুলের বৃত্তিভোগী ছাত্র হিসাবে ১৮২৪ খ্রী. হিন্দু কলেজে প্রবেশ করে কৃতিত্বের সঙ্গে ১৮২৯ খ্রী. পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। ঐ বছরই পটলডাঙ্গা স্কুলের দ্বিতীয় শিক্ষক নিযুক্ত হন। ডিরোজিও-অনুপ্রাণিত ‘ইয়ংবেঙ্গল’ গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা ছিলেন। ১৭.১০.১৮৩২ খ্রী. ডাফ সাহেবের কাছ থেকে খ্ৰীষ্টধর্মে দীক্ষাগ্ৰহণ করেন। ফলে পটলডাঙ্গা স্কুলের চাকরি চলে যায়। পরে মিশনারী সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হলে প্ৰথম বাঙালী আচাৰ্য নিযুক্ত হন। তিনি ১৮৩৩ খ্রী. একটি বালককে খ্ৰীষ্টধর্মে দীক্ষিত করার অপরাধে অভিযুক্ত হন। কয়েক বছর পরে তিনি স্ত্রী, ভ্ৰাতা এবং জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর প্রমুখকে খ্ৰীষ্টধর্মে দীক্ষিত করেন। মাইকেল মধুসূদনের ধর্মান্তর গ্রহণের ব্যাপারে তার সহায়তা ছিল। ১৮৩৯ খ্ৰী ক্রাইস্ট চার্চ প্রতিষ্ঠিত মির্জাপুর স্কুলের সুপারিন্টেণ্ডেন্ট নিযুক্ত হন। বাংলায় উপাসনা করতেন। তের বছর কাজ করবার পর ১৮৫২ খ্রী. বিশপস কলেজের অধ্যাপক হন এবং উক্ত কলেজে বাংলায় খ্ৰীষ্টধর্ম-চৰ্চা ও দরিদ্র ছাত্রদের বৃত্তির জন্য আট হাজার টাকা দান করেন। নব্যদলের মুখপত্ৰ ‘দি এনকোয়ারার’ (১৮৩১), ‘হিন্দু ইউথ’ (১৮৩১), ‘গভর্নমেন্ট গেজেট’ (১৮৪০), ‘সংবাদ সুধাংশু’ (১৮৫০) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ‘জ্ঞানোপার্জিকা সভা’, ‘এশিয়াটিক সোসাইটি’, ‘বেথুন সোসাইটি’, ‘ফ্যামিলী লিটারারি ক্লাব’, ‘বঙ্গীয় সমাজবিজ্ঞান সভা’, ‘ভারত সংস্কার সভা’ প্ৰভৃতি সংগঠনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। রচিত গ্ৰন্থ: ‘দি পোরসিকিউটেড’ (নাটক), ‘উপদেশকথা’, ‘ডায়ালগস অন দি হিন্দু ফিলসফি’, ‘ষড়দর্শন সংবাদ’, ‘দি এরিয়ান উইটনেস, ‘টু এসেজ অ্যাজ সাপ্লিমেন্টস টু দি এরিয়ান উইটনেস’ প্রভৃতি। এ ছাড়াও কয়েকটি সংস্কৃত পাঠ্যপুস্তকের রচয়িতা। ১৮৭৬ খ্ৰী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ডক্টর অফ ল’ ও সরকার কর্তৃক ‘সিআইই’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৮৬৪ খ্ৰী. বিদ্যাসাগরের সঙ্গে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সভ্য নির্বাচিত হন এবং দু’বার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিশনার হয়েছিলেন। ১৮৭৬ খ্রী. ইন্ডিয়া লীগের আন্দোলনের ফলে নির্বাচন প্ৰথা প্রবর্তিত হলে পৌরসভার সদস্য হন। বাংলায় বিশ্বকোষ রচনায় অন্যতম পথিকৃৎ। ইংরেজী বাংলায় সঙ্কলিত কোষগ্রন্থ ‘বিদ্যাকল্পদ্রুম’ (১৩ খণ্ড) প্ৰকাশ করেন। বাংলা, ইংরেজী, সংস্কৃত, গ্ৰীক, ল্যাটিন, হিব্ৰু প্রভৃতি ভাষাভিজ্ঞ ছিলেন। ‘ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্টে’র বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত সভায় (১৭ এপ্রিল ১৮৭৮) তেজোদীপ্ত বক্তৃতা প্রদান করেন।
পূর্ববর্তী:
« কৃষ্ণমোহন দাস
« কৃষ্ণমোহন দাস
পরবর্তী:
কৃষ্ণমোহন ভট্টাচাৰ্য »
কৃষ্ণমোহন ভট্টাচাৰ্য »
Leave a Reply