কৃষ্ণভাবিনী দাস (১৮৬৪ – ১৭.২.১৯১৯) চুয়াডাঙ্গা-নদীয়া। জয়নারায়ণ সর্বাধিকারী। নবছর বয়সে আইন ব্যবসায়ী শ্ৰীনাথ দাসের পুত্র সেঞ্চুরী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে তার বিবাহ হয়। স্বামীর আগ্রহে লেখাপড়া করতে থাকেন। ছোট ছোট কবিতাও লিখতেন। স্বামী বিলাত গিয়ে সিবিল সার্ভিস পরীক্ষা পাশ করে ফিরে আসেন। কিন্তু বিলাতযাত্রার জন্য জাতিচ্যুত এবং ত্যাজ্যপুত্র হন। কিছুদিন পর দেবেন্দ্ৰনাথ আবার বিলাত যাত্রা করেন। এবার আত্মীয়দের নিষেধ অগ্ৰাহ্য করে তিনি স্বামীর সঙ্গ নেন। তার ছ’বছরের একমাত্র কন্যা শ্বশুরের কাছে থেকে যায়। বিলাতে নারীমুক্তির স্বরূপ দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। সেখানে বহুভাষাবিদ অধ্যাপক স্বামীর সাহচর্যে অনেক বেশি পড়াশোনা করেন। ১৮৮৫ খ্রী. ইংলন্ডে ‘বঙ্গ মহিলা’ ছদ্মনামে গ্ৰন্থ রচনা করেন। প্ৰকাশের অল্প পরেই গ্রন্থটি নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত হয়-স্ত্রী-স্বাধীনতা সম্বন্ধে লেখিকার মতবাদই তার কারণ। তার লিখিত ‘বিলাতের গল্প’ ও ‘ইংরাজদের পর্ব’ ১৮৯২ খ্রী. ‘সখা’ পত্রিকায় প্ৰকাশিত হয়। ১৪ বছর পর দেশে ফিরে যখন দেখলেন কন্যা অপাত্রে পড়েছে, তখন তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন, অমন স্বামীকে ত্যাগ করে কল্যাণকর কাজে আত্মনিয়োগ করতে। কন্যার সংস্কারাচ্ছন্ন মন তা মেনে নিতে পারেনি। এই ঘটনায় তিনি মেয়েদের শিক্ষা ও মনের মুক্তির প্রয়োজনীয়তা আরও গভীরভাবে অনুভব করেন। ১৯০৯ খ্রী. ২২ দিনের ব্যবধানে স্বামী ও একমাত্র সন্তান হারিয়ে তিনি ভারত স্ত্রী মহামণ্ডলের সেবা কাজে আত্মনিয়োগ করেন। অভ্যস্থ বিলাসবাহুল্য ত্যাগ করে মোটা খদ্দরের শাড়ী পরে, খালি পায়ে কলিকাতার পথে পথে ঘুরে পর্দানশীন মেয়েদের শিক্ষা-ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। তারই উদ্যোগে মণ্ডলের তিনটি কেন্দ্ৰ স্থাপন। করা সম্ভব হয়। এইসব কেন্দ্রে বাংলা, ইংরেজী, ইতিহাস, ভূগোল, অঙ্ক, সেলাই, হাতের কাজ, সঙ্গীত ও যন্ত্রবাদন শিক্ষা দেওয়া হত। মণ্ডলের নিয়মিত অধিবেশনে বিবিধ আলোচনা চলত ও সরলাদেবীর পরিচালনায় ‘ভাই চম্পা’ ও ‘নিবেদিতা’ নাটক দুটির অভিনয় হত। ১৯১৬ খ্রী. তিনি একটি বিধবা আশ্রমও স্থাপন করেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষালাভ না করেও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর লিখিত বহু সুচিন্তিত সন্দর্ভ ‘ভারতী’, ‘সাহিত্য’, ‘সখা, ‘প্ৰদীপ’, ‘প্রবাসী’ প্রভৃতি পত্রিকায় ছড়িয়ে আছে।
পূর্ববর্তী:
« কৃষ্ণবিহারী সেন
« কৃষ্ণবিহারী সেন
পরবর্তী:
কৃষ্ণমোহন দাস »
কৃষ্ণমোহন দাস »
Leave a Reply