কৃষ্ণদাস কবিরাজ (আনুমানিক ১৫৩০ – ১৬১৫) ঝামটপুর—বর্ধমান। ভগীরথী। প্রথমে কিছুদিন সংস্কৃত ব্যাকরণ ও ফারসী ভাষা শিক্ষা করেন। ২৬ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে বৃন্দাবনে যান এবং রঘুনাথ দাসের নিকট বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষাগ্ৰহণ করেন। ‘কৃষ্ণামৃত’ গ্রন্থের টীকা এবং ‘গোবিন্দ লীলামৃত’ ও ‘ভাগবতশাস্ত্ৰ – গূঢ়-রহস্য’ গ্রন্থের রচয়িতা। জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি-বৃদ্ধ বয়সে দীর্ঘকালের পরিশ্রমে বিরচিত আড়াই হাজার শ্লোক-সমন্বিত ‘চৈতন্য-চরিতামৃত’ গ্রন্থটি। এই গ্রন্থে তিনি কবিকর্ণপুর, মুরারিগুপ্ত, স্বরূপ দামোদর ও বৃন্দাবন দাসের রচিত চৈতন্য-জীবনীকে অনুসরণ করলেও তার উদ্দেশ্য ছিল বৃন্দাবনে গোস্বামীদের রচিত বৈষ্ণবদর্শনের রসভাষ্য রচনা করা ও সেই ভাষ্যের আলোকে চৈতন্যজীবনী ব্যাখ্যা করা। তিনি শ্ৰীচৈতন্যের আদিলীলা সংক্ষেপে বর্ণনা করলেও মধ্যলীলা ও অন্ত্যলীলা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। অন্ত্যলীলায় মহাপ্রভুর দিব্যোন্মাদ অবস্থার যে বিবরণ তিনি দিয়েছেন তা অন্য কোন চরিতগ্রন্থে পাওয়া যায় না। অসাধারণ পাণ্ডিত্য, দার্শনিক প্রজ্ঞা, চৈতন্যভক্তি, আন্তরিকতা ও বৈষ্ণবোচিত বিনয় তার কাব্যকে দুর্লভ মর্যাদা দান করেছে। তিনি তাঁর প্রিয় শিষ্য মুকুন্দ দত্তের সঙ্গে গ্রন্থের এক প্ৰতিলিপি বাঙলা দেশে পাঠান। পথে বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের রাজা হাম্বীর অমূল্য সম্পদ জ্ঞানে গ্ৰন্থ-পেটিকা লুঠ করেন। এই সংবাদে শোকার্ত কৃষ্ণদাস রাধাকুণ্ডে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
পূর্ববর্তী:
« কৃষ্ণদাস (দেবেন্দ্ৰকুমার সিংহরায়)
« কৃষ্ণদাস (দেবেন্দ্ৰকুমার সিংহরায়)
পরবর্তী:
কৃষ্ণদাস পাল, রায়বাহাদুর »
কৃষ্ণদাস পাল, রায়বাহাদুর »
Leave a Reply