কৃষ্ণকুমার মিত্র (ডিসে. ১৮৫২—৫.১২.১৯৩৬) বাঘিল-ময়মনসিংহ। পিতা গুরুচরণ নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিজ গ্রামে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। খ্যাতনামা অধ্যাপক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা কৃষ্ণকুমার জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন থেকে ১৮৭৬ খ্ৰী বি.এ. পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় ব্ৰাহ্মসমাজের সমর্থক, পরে কেশব সেন বিরোধী সাধারণ ব্ৰাহ্মসমাজের নেতা হন। বিখ্যাত রাজনারায়ণ বসুর কন্যা লীলাবতীকে বিবাহ করেন। ১৮৭৯ খ্রী. সিটি স্কুলে শিক্ষকরূপে যোগদান করেন এবং সিটি কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক ও তত্ত্বাবধায়ক হন। ১৯০৮ খ্রী. অবসর-গ্ৰহণ করেন। ১৮৭৬ খ্রী. দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীর সঙ্গে ভারতসভার যুগ্ম-সম্পাদক হন। কালীশঙ্কর শুকুল, হেরম্ব মৈত্র ও দ্বারকানাথের সাহায্যে ১৮৮৩ খ্রী. ‘সঞ্জীবনী’ সাপ্তাহিক পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। এই পত্রিকার শীর্ষদেশে ‘সাম্য, স্বাধীনতা, মৈত্রী’ এই আদর্শবাণী ঘোষণা করা হত। সিভিল সার্ভিস রুলের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির জন্য তিনি সুরেন্দ্রনাথের সঙ্গে উত্তর ভারত সফর করেন। শ্রমিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা ছিল। আসামের চা বাগানে ব্রিটিশ মালিক ও কর্মচারীদের বীভৎস শ্রমিক-শোষণ এবং বর্বর অত্যাচারের কাহিনী সঞ্জীবনীর পৃষ্ঠায় তিনি নিয়মিত প্ৰকাশ করতেন। দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীর সঙ্গে আসাম অঞ্চলে ভ্ৰমণ করেন (১৮৮৬)। স্তন্যপানরত শিশুকে লাথি মেরে হত্যা, প্ৰকাশ্য দিবালোকে ক্ষান্ত ডোমিনীকে ধর্ষণ, শুকুরমণি নামে কুলী রমণীর মৃত্যু ইত্যাদি ব্রিটিশ সরকার ও মালিকের বর্বরতার কাহিনী ঐ সময়ে প্রকাশ করায় চলিত ইমিগ্রেশন আইনের কিছুটা সংশোধন হয় (১৮৯৩)। এরই মধ্যে ১৮৯০ খ্রী. নীলচাষীদের শেষ পর্যায়ের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। বিচার-ব্যবস্থায় নিরপেক্ষতার অভাবে খুনী ইংরেজ আসামীদের বারে বারে আদালতে এসেও মুক্তি পাওয়ার ঘটনায় তার ক্ৰোধ এবং ঘূণা সম্ভবত অধিক বয়সেও তাকে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সক্রিয় হতে সাহায্য করেছিল। ফলে ৩নং রেগুলেশন আইনে তিনি আগ্রা দুর্গে বন্দী হন (১৯০৮-১০)। কংগ্রেসের সমর্থক ছিলেন কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন না। বিপন্না নারীদের উদ্ধার ও রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি ‘নারীরক্ষাসমিতি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। রচিত গ্রন্থঃ ‘মহম্মদ-চরিত’, ‘বুদ্ধদেব-চরিত ও বৌদ্ধধর্মের সংক্ষিপ্ত বিবরণ’ প্রভৃতি।
পূর্ববর্তী:
« কৃষ্ণকামিনী দাসী
« কৃষ্ণকামিনী দাসী
পরবর্তী:
কৃষ্ণগোপাল বসু »
কৃষ্ণগোপাল বসু »
Leave a Reply