কালিদাস রায়, কবিশেখর (২২.৬.১৮৮৯ – ২৫.১০.১৯৭৫) কড়ুই-বর্ধমান। পিতা যোগেন্দ্রনারায়ণ কাশিমবাজার রাজ এস্টেটের পদস্থ কর্মচারী ছিলেন। বহরমপুর কলেজ থেকে ১৯১০ খ্রী. সম্মানের সঙ্গে বি.এ. পাশ করে কিছুদিন কলিকাতা স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শনে এম.এ. পড়েন। কর্মজীবনের শুরু রংপুর জেলার উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী স্কুলের প্রধানশিক্ষক-রূপে। সেখান থেকে রায়বাহাদুর দীনেশচন্দ্ৰ সেন তাকে কলিকাতায় নিয়ে এসে ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনের সহকারী প্ৰধানশিক্ষকের পদে নিযুক্ত করেন। অবসর-গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত (১৯৫২) তিনি ঐ পদেই কর্মরত ছিলেন। ১৮ বছর বয়সে প্রকাশিত ‘কুন্দ’ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ‘পৰ্ণপুট’, ‘খুদকুঁড়া, ‘লাজাঞ্জলি’, ‘হৈমন্তী’, ‘বৈকালী’, ‘ব্রজবেণু’, ‘সন্ধ্যামণি’, ‘ঋতুমঙ্গল’, ‘চিত্তচিতা’, ‘রসকদম্ব’, ‘বল্লরী’, ‘পূর্ণাহুতি’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। চৈতন্যমঙ্গল-রচয়িতা লোচন দাসের বংশধর কালিদাস রায়ের মাতৃকুলও বৈষ্ণব সমাজে সুপরিচিত। ফলে বৈষ্ণবোচিত ভাবধারা তাকে উদ্বুদ্ধ করে। তাঁর কাব্যের মধ্যে সহজ, সরল ও আন্তরিকতার সুর পাওয়া যায়। তার রচিত প্ৰবন্ধ পুস্তক ‘প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্য পরিচয়’, ‘প্রাচীন বঙ্গ সাহিত্য’, ‘পদাবলী-সাহিত্য’, ‘শরৎ-সাহিত্য ও সাহিত্য প্রসঙ্গ’ প্রভৃতি। সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি বহু প্ৰবন্ধ নানা পত্র-পত্রিকায় লিখে গেছেন। ‘বেতালভট্ট’ ছদ্মনামে প্রকাশিত তাঁর রস-রচনাগুলিও বহুজনসমাদৃত। ১৯৬৩ খ্রী. ‘আনন্দ-পুরস্কার’ এবং ১৯৬৮ খ্ৰী. ‘পূৰ্ণাহুতি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ‘রবীন্দ্র-পুরস্কার’ পান। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ ও ‘সরোজিনী স্বর্ণপদক’ প্ৰদান করে। বিশ্বভারতী কর্তৃক ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি ও ১৯৭২ খ্রী. রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ডি-লিট’ উপাধি দ্বারা তিনি সম্মানিত হন। আদর্শ শিক্ষক হিসাবে ছিলেন কঠোর নিয়মনিষ্ঠ, একান্ত সহৃদয় এবং শিক্ষাদানের সঙ্গে ছাত্রদের চিত্তগঠনে তৎপর।
পূর্ববর্তী:
« কালিদাস মুখোপাধ্যায়
« কালিদাস মুখোপাধ্যায়
পরবর্তী:
কালিদাস রায় »
কালিদাস রায় »
Leave a Reply