কাৰ্তিকচন্দ্ৰ বসু (৩০.৭.-১২৮০ – ৮.৫.-১৩৬২ ব.) চাংড়িপোতা—চব্বিশ পরগনা। প্ৰসন্নকুমার। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মাতার মৃত্যু হলে নিজে ডাক্তার হয়ে দরিদ্রের চিকিৎসার সঙ্কল্প নেন। প্রবেশিকা ও এফ.এ. পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য ফল না করলেও মেডিক্যাল কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে ১৮৯৭ খ্ৰী. এম.বি. হন এবং তিনটি বৃত্তি ও একাধিক স্বর্ণপদক লাভ করেন। অচিরেই বিখ্যাত চিকিৎসকরূপে তার প্রভূত উপার্জন হতে থাকে। এ সময় বিলাত-যাত্রার বৃত্তি পেয়েও পরিবারের কথা চিন্তা করে যান নি। অল্প ফী’র ‘বাজার ডক্টর’-রূপে আমৃত্যু দরিদ্রের সেবা করে গেছেন। চক্ষুচিকিৎসকরূপে কাজ শুরু করলেও সাধারণ রোগের চিকিৎসকররূপেই সুপ্রতিষ্ঠিত হন। তার অন্য পরিচয় ব্যবসায়িরাপে। ছাত্রাবস্থায় রসায়নের পরীক্ষাব্যাপারে ঔষধ-ব্যবসায়ী বটকৃষ্ণ পালের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের প্রেরণায় বেঙ্গল কেমিক্যালে এসে প্রতিষ্ঠানটিকে কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কসে পরিণত করেন এবং দেশীয় ভেষজ ও ঔষধের ব্যবসায়ের গোড়াপত্তনেও সাহায্য করেন। আচার্যের স্বহস্তে প্ৰস্তুত জোয়ানের জল নিজের রোগীদের উপর ব্যবহার করে দেশীয় ভেষজের কার্যকারিতা প্ৰমাণ করেন। দেশীয় গাছগাছড়ার আয়ুৰ্বেদীয় প্রয়োগ জানার জন্য তিনি ভবতারণ শাস্ত্রীর সাহায্যে মূল সংস্কৃতে চরক ও সুশ্রুত অধ্যয়ন করেন এবং ভেষজ থেকে ঔষধ প্ৰস্তুতকালে কবিরাজ গণনাথ সেন ও অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদের বিজয়লালের পরামর্শ নিতেন। সুবিখ্যাত ‘ডাঃ বোসেজ ল্যাবরেটরী’র তিনি প্ৰতিষ্ঠাতা। তা ছাড়া ক্ৰমে স্থাপন করেন স্ট্যান্ডার্ড ড্রাগ ক্টোর্স, স্ট্যান্ডার্ড ড্রাগ প্রেস, স্ট্যান্ডার্ড এক্স-রে ল্যাবরেটরী, স্ট্যান্ডার্ড ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরী, ক্যালকাটা অপ্টিক্যাল কোম্পানী, বেলেঘাটা ইঞ্জিনিয়ারীং ওয়ার্কস, বেলেঘাটা অ্যাসিড অ্যাণ্ড কেমিক্যাল ওয়ার্কস এবং রাজলক্ষ্মী সুগার মিল। বেদনা উপশমের অ্যাসপিরিনজাতীয় ঔষধের দেশী বিকল্প ‘নানালা’ প্ৰস্তুত এদেশে তিনিই প্ৰথম করেন। রাউলফিয়া বা সর্পগন্ধা থেকে রক্তচাপ-সংক্রান্ত রোগের ঔষধ প্ৰস্তুত করে এ ব্যাপারে দিকনির্দেশ করেন। বাংলা, ইংরেজী, হিন্দী ও উর্দুতে স্বাস্থ্য-বিষয়ক পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। এর মধ্যে বাংলা পত্রিকাটি নিজ-সম্পাদনায় ৪৫ বছর প্রকাশিত হয়েছিল। ‘দেহতত্ত্ব’, ‘ভারতীয় ভৈষজ্য তত্ত্ব’, ‘ফার্মাকোপিয়া ইন্ডিকা’ তার উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ। তিনি দেওঘরে প্রথম যক্ষ্মারোগীর স্যানাটোরিয়াম স্থাপন করেন। প্রাকৃতিক চিকিৎসালয় স্থাপন তার আর এক কীর্তি। তা ছাড়া ‘কৃষি, গোপালন এবং জনসেবা লিমিটেড’ নামে চাষবাসের যৌথ ব্যবসায় স্থাপনে এবং উদ্ধান্তু পুনর্বাসনে নিজস্ব পরিকল্পনায় কাজ করেছেন।
পূর্ববর্তী:
« কায়কোবাদ
« কায়কোবাদ
পরবর্তী:
কিরণ মুখোপাধ্যায় »
কিরণ মুখোপাধ্যায় »
Leave a Reply