কাঙাল হরিনাথ (১৮৩৩–১৬৮৪-১৮৯৬) কুমারখালি-নদীয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা)। হরচন্দ্ৰ মজুমদার। অর্থাভাবে স্কুলের শিক্ষা সম্পূর্ণ করতে পারেন নি। তবে সারা জীবন অবহেলিত গ্রামবাঙলায় শিক্ষাবিস্তারের জন্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রের মাধ্যমে আন্দোলন করেছেন। গোপাল কুণ্ডু, যাদব কুণ্ডু, গোপাল সানাল প্রমুখ বন্ধুদের সাহায্যে ১৩.১.১৮৫৫ শ্ৰী স্বগ্রামে একটি ভার্নাকুলার স্কুল স্থাপন করে প্রথম দিকে অবৈতনিক শিক্ষকরূপে কাজ করেন। তারই সাহায্যে কৃষ্ণনাথ মজুমদার কুমারখালিতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন (২৩-১২-১৮৫৬)। অত্যাচারিত অসহায় কৃষক-সম্প্রদায়কে রক্ষার হাতিয়ারী-রূপে সাংবাদিকতাবৃত্তি গ্ৰহণ করেছিলেন। প্ৰথমে ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় লিখতেন, পরে ১৮৬৩ খ্রী. ‘গ্রামবাৰ্ত্তা প্ৰকাশিকা’ নামে একখানি মাসিকপত্র প্রকাশ করেন। ঐ পত্রিকা ক্রমে পাক্ষিক ও সবশেষে এক পয়সা মূল্যের সাপ্তাহিকে পরিণত হয়। সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞান-বিষয়ক বিবিধ প্ৰবন্ধ এ পত্রিকায় থাকলেও প্রধানত নীলকর ও জমিদার-শ্রেণীর কৃষক-শোষণের তথ্যনির্ভর কাহিনী প্রকাশের জন্য পত্রিকাটি খ্যাত হয়। ব্রিটিশ ম্যাজিষ্ট্রেট ও দেশী জমিদারদের আক্রমণাত্মক ভীতিপ্ৰদৰ্শন তাকে একাজ থেকে বিরত করতে পারে নি। নিঃস্ব কাঙাল হরিনাথ সারা জীবনে সচ্ছলতা না পেলেও তার পত্রিকার জন্য নিজস্ব ছাপাখানা হয়েছিল (১৮৭৩)। ১৮ বছর রাজশাহীর রাণী স্বর্ণকুমারী দেবীর অর্থানুকূল্যে কাগজ চালোনর পর আর্থিক কারণে এবং সরকারের মুদ্রণ শাসনের ব্যবস্থার জন্য পত্রিকাটিকে বন্ধ করে দিতে হয়। এ সময়ে একটি বাউলের দল গঠন করেন। ধর্মসাধনার অঙ্গরূপে তিনি বহু সহজ-সুরের গান রচনা করে সদলে সেই গঙ্কন গেয়ে বেড়াতেন। ‘হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হ’ল’ গানটি তারই রচিত। স্বরচিত গানে ‘কাঙালী’-ভণিতা ব্যবহার করতেন। গদ্য ও পদ্য রচনায়ও তার পারদর্শিতা ছিল। মুদ্রিত গ্ৰন্থসংখ্যা ১৮টি। ১৯০১ খ্ৰী. ‘হরিনাথ গ্রন্থাবলী’ প্ৰকাশিত হয়। রচিত বিশেষ উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ : ‘বিজয়বসন্ত’, ‘চারুচরিত্র’, ‘কবিতা কৌমুদী’, ‘অক্রুর সংবাদ’, ‘কাঙাল ফিকিরচাঁদ-ফকিরের গীতাবলী’ ইত্যাদি। সাহিত্যকর্মে তার শিষ্যগণের মধ্যে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, দীনেন্দ্ৰনাথ রায়, জলধর সেন প্রমুখেরা পরবর্তী জীবনে খ্যাতি অর্জন করেন।
পূর্ববর্তী:
« কাকুলী শাহ
« কাকুলী শাহ
পরবর্তী:
কাজী করম উল্লাহ »
কাজী করম উল্লাহ »
Leave a Reply