ঈশ্বরচন্দ্ৰ গুপ্ত (মার্চ ১৮১২ – ২৩-১-১৮৫৯) শিয়ালডাঙ্গা নীলকুঠি—কাঁচড়াপাড়া। হরিনারায়ণ। মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম। বাঙালী কবিয়াল-রচনারীতির শেষ কবি এবং বিভিন্ন বিষয় অবলম্বনে খণ্ডকবিতা রচনার প্রবর্তক। উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে জনসাধারণের মধ্যে কবিতাপাঠের প্রবর্তনও তিনি করেন। বাল্যে শিক্ষায় অমনোযোগী ছিলেন। কিন্তু মুখে মুখে সঙ্গীত-রচনার ক্ষমতা ছিল এবং গ্রামের কবি ও ওস্তাদের দলে গান বেঁধে দিতেন। দশ বছর বয়সে মাতৃবিয়োগ ঘটলে কলিকাতায় মাতুলালয়ে এসে বাস করতে থাকেন। ব্যঙ্গাত্মক কবিতা-রচনায় বিখ্যাত হয়েছিলেন। সে যুগের কোন লোকই গুপ্ত কবির বিদ্রূপ থেকে রেহাই পান নি। সাধারণ মানুষের ভাষায় কাব্য রচনা করে তিনি কবিপ্ৰসিদ্ধি লাভ করেন। সাংবাদিকতায় অসাধারণ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ১৮৩১ খ্রী. ২৮ জানুয়ারী যোগেন্দ্র ঠাকুরের সহযোগিতায় ‘সংবাদ প্রভাকর’ সাপ্তাহিক পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। কালক্রমে বহু ঘটনার পর ১৮৩৯ খ্রী. ১৪ জুন এই পত্রিকাই বাংলা দৈনিক রূপে প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও ‘পাষণ্ডপীড়ন’, ‘সংবাদ রত্নাবলী’, ‘সংবাদসাধুরঞ্জন এবং আরও তিনটি পত্রিকা প্ৰকাশ ও সম্পাদনা করেন। গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যের ‘রসরাজ’ পত্রিকার সঙ্গে কবিতাযুদ্ধ চালাবার জন্যই তিনি ‘পাষণ্ডপীড়ন’ পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। তার অন্যতম সাহিত্যকীর্তি রামপ্ৰসাদ সেন, রামনিধি গুপ্ত, রামমোহন বসু, নিত্যানন্দ দাস বৈরাগী, হরীঠাকুর, নৃসিংহ, লক্ষ্মীকান্ত বিশ্বাস প্রভৃতি বিভিন্ন সভা-কবির ও পাঁচালীকারের রচনা সংগ্রহ ও প্রকাশ। ‘বোধেন্দুবিকাস’ নাটকে ভাষা ও ছন্দে তাঁর দক্ষতার প্রমাণ সুস্পষ্ট। বাংলা সাহিত্যে তিনি যুগসন্ধির কবি বলে সুপরিচিত। তার কাব্য অমর না হলেও স্বকীয়তার বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল। রক্ষণশীল হিন্দুসমাজভুক্ত ছিলেন। ১৮২৯ খ্রী. থেকে তাকে সামাজিক আন্দোলনে নব্যদের সাথী হতে দেখা যায়। তত্ত্ববোধিনী সভা ও হিন্দু থিয়ফিলানথ্রপিক সভার সঙ্গেও সক্রিয় যোগাযোগ ছিল। ধৰ্মসভার বিরোধী ছিলেন। বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক উন্নতি-বিষয়ক আন্দোলনের সমর্থন করতেন ও নিপীড়িত জনসাধারণের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« ঈশ্বর ঘোষ
« ঈশ্বর ঘোষ
পরবর্তী:
ঈশ্বরচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায় »
ঈশ্বরচন্দ্ৰ বন্দ্যোপাধ্যায় »
Leave a Reply