আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, স্যার, সি.এস.আই. (২৯-৬-১৮৬৪ – ২৫-৫-১৯২৪) বৌবাজার, মলঙ্গা লেন — কলিকাতা। প্ৰসিদ্ধ চিকিৎসক গঙ্গাপ্ৰসাদ। ছাত্রজীবন শুরু চক্রবেড়িয়া ও সাউথ সুবার্কিন স্কুলে। গণিতে অসাধারণ মেধাবী ছিলেন। স্কুল জীবনেই ‘কেমব্রিজ মেসেঞ্জার অফ ম্যাথিমেটিকস-এ দুরূহ গাণিতিক সমস্যার সমাধান প্ৰকাশ করেন। এন্ট্রান্সে ২য় (১৮৭৯), এফ.এ-তে ৩য় (১৮৮১) এবং বি.এ. পরীক্ষায় তিনটি বিষয়ে প্রথম হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্ৰথম স্থান অধিকার করেন। ছ’মাস পরেই এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। পরের বছর প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ বৃত্তি পান ও ফিজিক্সে এম-এ, পাশ করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনিই প্রথম দুটি বিষয়ে এম-এ। ১৮৮৮ শ্ৰী, ওকালতি পরীক্ষা পাশ করেন। দশ বছরে (১৮৮০–১৮৯০) কুড়িটি গাণিতিক মূল্যবান প্ৰবন্ধ প্ৰকাশ করেন। ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস ও ইকুয়েশনে তার দুরূহ সমাধান-ক্ষমতা বিদেশেও স্বীকৃত হয়। ওকালতি-ব্যবসায়ে প্রবেশের আগে সরকার কর্তৃক শিক্ষাবিভাগে চাকরির অনুরোধ প্ৰত্যাখান করেন। ১৮৯৪ খ্রী. ডক্টর অফ ল হন এবং টেগোর ল লেকচারাররূপে ‘ল অফ পারপিটুইটিজ’-এর একখানি প্ৰামাণিক গ্ৰন্থ রচনা করেন। স্বাজাত্যাভিমানী আশুতোষ ইংরেজদের সমমর্যাদা দাবি করতেন। অল্প কিছুদিন রাজনীতিও করেছেন। ১৮৯৮–১৯০৪ খ্রী. কর্পোরেশনের সদস্য এবং ১৮৯৯–১৯০৪ খ্রী. ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য ছিলেন। উক্ত নির্বাচনে একবার সুরেন্দ্রনাথ ও দ্বারভাঙ্গার মহারাজকে পরাজিত করেন (১৯০১)। ১৯০৪ খ্রী. হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হলে রাজনীতি ত্যাগ করেন। তার চিরস্থায়ী খ্যাতি শিক্ষাক্ষেত্রে। ১৮৮৯ খ্রী. সেনেট ও সিণ্ডিকেটের সদস্য হন। প্রথম থেকেই মাতৃভাষায় শিক্ষা-প্রসারের চেষ্টা করেন। তিনিই প্ৰথম এ বিষয়ের প্রস্তাবক। ১৯০৬–১৯১৪ খ্রী. চার টার্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচাৰ্য ছিলেন। সে সময়ে তিনি এর পুনর্গঠন এবং ছয়টি নূতন। স্নাতকোত্তর বিভাগ সৃষ্টি করেন, যথা, তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ববিজ্ঞান, ব্যবহারিক, মনোবিজ্ঞান, ফলিত রসায়ন, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং ইসলামের সংস্কৃতি। এই সঙ্গে ভারতীয় ভাষাসমূহের উচ্চতর পরীক্ষা ও তদনুসারে অধ্যাপনার ব্যবস্থা করেন। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বেশি বিভাগ ও অনেক বেশি ভাষায় শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা প্ৰধানত তারই একক প্রচেষ্টার ফল। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বয়ংকর্তৃত্বের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। প্ৰধানত তারই অসামান্য ব্যক্তিত্ব ও নির্ভীক সংগ্রামশীলতার জন্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের পরিবেশেও স্বয়ংশাসিত প্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে ওঠে। ইংরেজ গভর্নর লর্ড লিটন যখন (১৯২৩–১৯২৪) বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চান তখন তিনি রাজশক্তির সঙ্গে বাদানুবাদে প্ৰবৃত্ত হন। ১৯২৩ খ্রী. গভর্নর শর্তসাপেক্ষে নতুন টার্মে তাকে উপাচার্যের পদ গ্ৰহণ করতে বললে তিনি তা ঘূণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। এই সময় দেশবাসী তাকে ‘Bengal Tiger-বাংলার বাঘ’ আখ্যায় ভূষিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসন্ধান বিষয়ে স্যাডলার কমিশনের সদস্য, তিনবার এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরী (বর্তমানে ন্যাশনাল লাইব্রেরী) কাউন্সিলের সভাপতি (১৯১০), ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের অন্যতম সংগঠক ও প্ৰথম সভাপতি, বিজ্ঞান-চৰ্চার ভারতীয় সমিতির সভাপতি ছিলেন। সাহিত্যে জাতীয় সাহিত্য’ নামে তার প্রবন্ধ-সংগ্ৰহ এক বিশিষ্ট অবদান। পালি, ফরাসী ও রুশ ভাষাভিজ্ঞ ছিলেন। স্বীয় বিধবা কন্যার পুনর্বিবাহ দিয়েছিলেন। সিংহলের মহাবোধি সোসাইটি কর্তৃক ‘সম্বুদ্ধগম চক্রবর্তী’ উপাধি ও দেশীয় পণ্ডিতগণ কর্তৃক ‘সরস্বতী’, এবং শাস্ত্রীবাচস্পতি উপাধিতে ভূষিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মায়ের নামে তিনি ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক প্রবর্তন করেন।
পূর্ববর্তী:
« আশুতোষ ভট্টাচার্য
« আশুতোষ ভট্টাচার্য
পরবর্তী:
আশুতোষ লাহিড়ী »
আশুতোষ লাহিড়ী »
Leave a Reply