আবদুল হালিম (৬-১২-১৯০১–২৯-৪-১৯৬৬)। কেউবুড়ী-বর্ধমান। আবুল হোসেন। বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলন ও সংগঠন গড়ে তোলার অন্যতম পথিকৃৎ। শিশুকালে মা-বাবার মৃত্যু হয়। নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে চাকরির সন্ধানে কলিকাতায় আসেন এবং নিজ উদ্যোগে বাংলা ও ইংরেজী ভাষা আয়ত্ত করেন। ১৯২১ খ্রী. চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। ফলে গ্রেপ্তার হন ও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। মুক্তির পর কমিউনিস্ট পার্টি গড়ার কাজে মুজফফর আহমেদ ও আবদুর রেজাক খানের সহযোগী হন। তাদের সাহায্য করতেন বুক কোম্পানীর কুতুবুদ্দিন আহমদ। নজরুল ইসলামের পরিচালতি ‘লাঙল (১৯২৫) ও ১৯২৬ খ্রী. মুজফফর আহমেদের উদ্যোগে প্রকাশিত ‘গণবাণী’ পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯২৫ খ্ৰী. গঠিত লেবার স্বরাজ পার্টির হেমন্তকুমার সরকার, সাহিত্যিক নরেশচন্দ্ৰ সেনগুপ্ত ও অ্যাডভোকেট অতুল গুপ্তর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। ১৯২৬ খ্রী. এই পার্টির নাম পরিবর্তন করে হয় ‘ওয়ার্কার্স অ্যাণ্ড পেজেন্টস পার্টি’। তিনি এই পার্টির কাজ পরিচালনা করেন। মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় মুজফফর আহমেদ ১৯২৯–৩৬ খ্রী. জেলে আবদ্ধ থাকা কালে প্রতিকুল অবস্থার মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার গুরুদায়িত্ব তিনি বহন করেছেন। ১৯৩০ খ্রী. কাটার্স স্ট্রাইক-এর সময় ইস্তাহার প্রকাশ করে কারারুদ্ধ হন। ১৯৩০–৩২ খ্রী. ৮ জন। সর্বক্ষণের কর্মীকে নিয়ে তিনি কর্মীদের মার্ক্সবাদী পুস্তকাদি পড়ান ও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন পার্টি গুপগুলিকে একসূত্রে বাঁধার কাজ করেছেন। ১৯৩৩ খ্রী. তার উদ্যোগে এবং রণেন সেন ও সোমনাথ লাহিড়ীর সহযোগিতায় কলিকাতায় গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির একটি সারা ভারত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে যে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হয়। তিনি তার সদস্যপদ লাভ করেন। আমৃত্যু তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কস্ট্রোল কমিশনের সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন গড়ার কাজ পরিচালনা করেন। ১৯৩১–৩৪ খ্রী. তার ‘ সহায়তায় ছাত্র লীগ গঠিত হয়। ১৯৪৪ খ্রী. পর্যন্ত তিনি জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। ১৯৩৪ খ্ৰী. পর্যন্ত বাংলা ও হিন্দীতে বেশ কয়েকটি পত্র-পত্রিকা প্ৰকাশ করেন। এ সময় প্ৰকাশক, সম্পাদক, লেখক হিসাবে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ১৯৩৪–৩৮ খ্রী. কারাগারে থাকার সময়ে বন্দীদের মধ্যে মার্কসবাদের প্রচার করেছেন। ১৯৪০ – ৪২ খ্রী. ও ১৯৫০ – ৫২ খ্রী. নিবর্তনমূলক আটক আইনে বিভিন্ন জেল ও বন্দীশিবিরে আটক থাকেন। দীর্ঘদিন আত্মগোপন করে পার্টির কাজ করেছেন। ১৯৫৫–৫৬, ৫৮–৫৯ খ্রী. কয়েকবার ট্রাম ও খাদ্য আন্দোলনে গ্রেপ্তার হয়েছেন। নভেম্বর ১৯৬২ শ্ৰী, ভারতরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে মার্চ ১৯৬৪ খ্রী. আটক থাকেন। জুলাই ১৯৬৫ খ্রী. পুনরায় গ্রেপ্তার হয়ে মৃত্যুর মাত্র ১০ দিন আগে ছাড়া পান। কমিউনিস্ট প্রকাশের উদ্যোগে ‘গণশক্তি পাবলিশিং হাউস’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার রচিত পুস্তক : টীকা সহ কমিউনিস্ট ইশতেহার, কমিউনিজম, রুশিয়ার গণআন্দোলন প্রভৃতি। ১৯৫২ খ্রী. নির্বাচন থেকে আমৃত্যু বিধান পরিষদের সদস্য ছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মৌলানা
« আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মৌলানা
পরবর্তী:
আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন »
আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন »
Leave a Reply