আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মৌলানা (১৮৮০–১৭-১১-১৯৭৬) ধানগড়া-পাবনা। হাজী শরাফৎ আলী খান। বাল্যকালে নাম ছিল ‘চোগা মিয়া’। ১০ বছর বয়সে টাঙ্গাইলে মক্তবের পড়া শেষ করে যুক্তপ্রদেশের দেওবন্ধে বিদ্যার্জনের জন্য যান। তারপরেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২৮ বছর বয়সে ১৯০৪ খ্ৰী. ‘আসামে কুখ্যাত ‘লাইন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় হন ও গারোদের খ্ৰীষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে বাধা দেওয়ার জন্য একটি ঐস্লামিক সংগঠনে যোগ দেন। মক্কাতে তীৰ্থ করা সেরে তিনি ১৯১৯ খ্রী. খিলাফৎ আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারারুদ্ধ হন। ছাড়া পেয়ে বিপ্লবী অনুশীলন দলে যোগ দেন ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপের জন্য ১৯২৪ খ্রী. গ্রেপ্তার হন। কৃষক আন্দোলনকে সংগঠিত করাই তার প্রধান রাজনৈতিক কাজ ছিল এইজন্য বহিষ্কৃত হয়ে আসামে চলে যান। সেখানে প্রবাসী বাঙালীদের অধিকারের জন্য লড়াই করেন ও ১৩ বার জেল খাটেন। ১১ বছর প্রাদেশিক আইনসভায় বাঙালীদের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৩৬ খ্ৰী লাহোরে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের অধিবেশনের পরে তিনি আসামে তার শাখা গঠন করেন ও তার সভাপতি হন। ১৯৪২ খ্রী. ভাসানীচরের ঐতিহাসিক কৃষক সম্মেলনে তীব্র ভাষণের জন্য ‘ভাসানী’ উপাধি পান। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৪৮ খ্ৰী. পূর্ব-পাকিস্তানে ফিরে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে জড়িত হন। ঐ বছরই মুসলিম লীগ ত্যাগ করে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে টাঙ্গাইল থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পূর্ব-পাকিস্তানের পরিষদ-সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৯ খ্রী. ঐতিহাসিক ভুখা মিছিলের পর গ্রেপ্তার হলে ১৯৫০ খ্রী. অনশন ধর্মঘটের ফলে ছাড়া পান। পুনরায় ১৯৫২ খ্রী. ভাষা আন্দোলনের জন্য গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৬ খ্রী. ফজলুল হক ও সোহরাবদীর সঙ্গে তার দল যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। ১৯৫৭ খ্রী. প্ৰাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি নিয়ে সোহরাবর্দীর সঙ্গে মতান্তর হলে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন করেন। ১৯৫৪ খ্ৰী বিশ্বশান্তি কংগ্রেসে স্টকহমে বিশ্বশান্তি সম্মেলনের সভাপতি হয়ে ইউরোপ যান ও পূর্ববাঙলার দাবিদাওয়া নিয়ে প্রচার করেন। দেশে ফিরে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী ও ১৯৫৮ খ্রী. আয়ুব-বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের জন্য তাকে ৫ বছর অন্তরীণ করে রাখা হয়। ১৯৬২ খ্রী. অন্তরীণ অবস্থায় অনশন ধর্মঘট করেন। ১৯৬৩ খ্রী. গণচীনের জাতীয় দিবসের উৎসবে যোগদানের জন্য চীন ও জাপান যান। ১৯৬৫ খ্রী. কিউবায় ত্রিদেশীয় সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৬৮ খ্রী. সরকারী ভবন ইত্যাদি ঘেরাও আন্দোলন শুরু হলে ১৪৪ ধারা অমান্য করেন ও আয়ুবের গোল টেবিলের বৈঠক বর্জন করেন। ১৯৭১ খ্রী. মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ঐ সময়ে অসুস্থ থাকায় সক্রিয়ভাবে কিছু না করতে পারলেও জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিলেও পাকিস্তানের মিত্র চীনের বিরুদ্ধে কখনও কিছু বলেন নি। ১৯৭২ খ্রী. স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে অবাধ সীমান্ত বাণিজ্য ও অসম বাণিজ্য চুক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিচালনা করেন। ১৯৭৪ খ্রী. সর্বদলীয় খাদ্য কমিটি গড়ে সীমান্তের চোরা চালান, কালোবাজারী, সরকারী দুনীতি দমন ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্য হ্রাস করার জন্য অনশন শুরু করেন। ১৯৭৬ খ্রী. টাঙ্গাইলের সন্তোষে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘কাগমারী মহম্মদ আলি কলেজ ও পাঁচবিবির নজরুল কলেজ’। তারই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়।
পূর্ববর্তী:
« আবদুল হামিদ খান ইউসুফজায়ী
« আবদুল হামিদ খান ইউসুফজায়ী
পরবর্তী:
আবদুল হালিম »
আবদুল হালিম »
Leave a Reply