আনন্দমোহন বসু (২৩.৬.১৮৪৭—২০.৮.১৯০৬) জয়সিদ্ধি-ময়মনসিংহ। পদ্মলোচন। বিত্তশালী পরিবারে জন্ম। ১৮৬২ খ্রীঃ ময়মনসিংহ জেলা স্কুল। থেকে নবম স্থান অধিকার করে প্রবেশিকা ও পরে কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে এফ.এ, বি-এ, এবং এম-এ। (গণিতশাস্ত্রে) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন। প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ১০ হাজার টাকা বৃত্তি পান। ১৮৭৪ খ্রী. ইংলণ্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত-বিষয়ক সর্বোচ্চ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম ভারতীয় ‘র্যাংলার’ হন। ব্যারিস্টার হয়ে দেশে ফিরে আইন ব্যবসায় শুরু করেন। এম.এ. পরীক্ষার আগেই বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্রের সহোদরা স্বর্ণপ্রভার সঙ্গে বিবাহ হয়। ১৮৬৯ খ্রী–কেশবচন্দ্রের নিকট সন্ত্রীক ব্ৰাহ্মধর্মে দীক্ষাগ্ৰহণ করেন। এই সময় তিনি কেশবচন্দ্ৰ-প্ৰতিষ্ঠিত ভারতবর্ষীয় ব্ৰাহ্মসমাজের একজন সদস্য ছিলেন এবং কেশবচন্দ্রের সর্ববিধ কাজে সহযোগিতা করতেন। কিছুদিন পরে, কেশবচন্দ্রের সঙ্গে মতবিরোধ ঘটলে তিনি ও শিবনাথ শাস্ত্রী, দুৰ্গামোহন দাস, উমেশচন্দ্ৰ দত্ত, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রভৃতি ১৮৭৮ খ্রী. ১৫ মে ‘সাধারণ ব্ৰাহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই সমাজের প্রথম সভাপতি। সমাজের নিজস্ব ভবন-নির্মাণে এবং সমাজ প্রতিষ্ঠিত ‘সিটি কলেজ ও ‘সিটি স্কুল’ স্থাপনে অগ্রণীর ভূমিকা গ্ৰহণ করেছিলেন। ছাত্রদের মধ্যে স্বদেশানুরাগ জাগ্রত করার উদ্দেশ্যে ১৮৭৫ খ্ৰী. ’স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করেন ও তার সভাপতি হন। ছাত্রদের আধ্যাত্মিক উন্নতি ও চরিত্রগঠনের মানসে শিবনাথ শাস্ত্রীর সহযোগিতায় ব্রাহ্মসমাজের অন্তর্ভুক্ত ‘ছাত্রসমাজ’ নামক প্রতিষ্ঠান গঠন করে (২৭-৪-১৮৭৯) তার অধিবেশনগুলিতে বক্তৃতা দিতেন। ‘ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’ স্থাপয়িতাদের অন্যতম। প্রতিষ্ঠা বছর ১৮৭৬ খ্রী. থেকে ১৮৮৪ খ্রী. তিনি তার সম্পাদক ও ১৮৯৬–১৯০৬ খ্রী. সভাপতি ছিলেন। নারীশিক্ষার উদ্দেশ্যে দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, দুৰ্গামোহন দাস প্রভৃতির সহযোগিতায় ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়’ স্থাপন করেন (১৮৭৬)। ১৮৭৫ খ্রীহিন্দুমেলায় অংশগ্রহণ করে বক্তৃতা দেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জন্মাবস্থা থেকে তার সক্রিয় নেতা এবং মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত ১৪শ কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করেন। ১৯০৩ খ্রী. থেকে আমৃত্যু শয্যাশায়ী থাকেন। অসুস্থ অবস্থাতেই ১৯০৫ খ্রী. ১৬ই অক্টোবর অখণ্ড বঙ্গদেশ স্থাপনের উদ্দেশ্যে ফেডারেশন হলের জমিতে অনুষ্ঠিত সভায় শয়নাবস্থায় বাহিত হয়ে এসে সভাপতিত্ব ও ভিত্তিপ্ৰস্তর স্থাপন করেন। সেদিন তার রচিত প্ৰতিজ্ঞাপত্র রবীন্দ্রনাথ পাঠ করেছিলেন। বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সভ্য, শিক্ষা কমিশনের সদস্য (১৮৮২), বঙ্গীয় প্রদেশিক সম্মেলনের বহরমপুর অধিবেশনের (১৮৯৫) সভাপতি এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ও সেনেটের সদস্য ছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« আনন্দমোহন বসু
« আনন্দমোহন বসু
পরবর্তী:
আনন্দময়ী »
আনন্দময়ী »
Leave a Reply