অমর নাগ, ডাঃ (অক্টোবর ১৯১৭ — ৯-১১-১৯৬৮) ভামো–ব্ৰহ্মদেশ। পিতা জিতেন্দ্ৰনাথ ছিলেন ব্ৰহ্মদেশ ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের প্রধান হিসাব-পরীক্ষক। ব্ৰহ্মদেশ কম্যুনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নেতা অমর নাগ ১৯৩৫ খ্রী. রেঙ্গুনের বেঙ্গল একাডেমী থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৩৬ খ্ৰী. আই. এস-সি, ও ১৯৪১ খ্রী. ডাক্তারী পাশ করেন। ভারতের অনুশীলন ও যুগান্তর দলের জিতেন ঘোষ, ভোলা মুখার্জী প্রমুখ বিপ্লবীদের প্রভাবে ১৯২৪ খ্রী. গঠিত ‘বেঙ্গলী স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সঙ্গে তিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই যুক্ত ছিলেন। ব্ৰহ্মদেশের অপর একটি শহরের ছাত্র হরিনারায়ণ ঘোষালের প্রভাবে এই সংগঠনের সদস্যরা কম্যুনিস্ট মতবাদের দিকে আকৃষ্ট হন। ১৯৩৭ খ্রী. ব্ৰহ্মের জনপ্রিয় ছাত্রনেতা আউঙ-সাঙের নেতৃত্বে সারা ব্ৰহ্মদেশ জুড়ে যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, অমর নাগ প্রভৃতিদের চেষ্টায় বাঙালী ছাত্ৰ সংগঠনও তাতে সামিল হয়। এইসব ছাত্র সংগঠন তখনকার খনিজ তেল শ্রমিক আন্দোলনকে সমর্থন জানায়। ১৯৪০ খ্রী. আউঙ-সাঙ, অমর নাগ প্রভৃতি ১১ জনের ছাত্র-যুবকদল রামগড় কংগ্রেসে যোগদান করেন। সেই বছরই রেঙ্গুনে বেআইনী কম্যুনিস্ট পার্টির জন্ম হয় যার প্রথম সম্পাদক ছিলেন আউঙ-সাঙ। এই দলে যুক্ত ছিলেন ব্ৰহ্মের কৃষক আন্দোলনের ও অন্যান্য জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় থাকিন—থান-টুন, বা-শোয়ে, বা-হিয়েন প্রমুখ এবং হরিনারায়ণ ঘোষাল, ডাঃ অমর নাগ, মুষ্টিযোদ্ধা ও ছাত্র অমর দে, গোপাল ও মাধব মুসী, কান্তি রায়, সুবোধ ব্যানার্জী, দীনেশ বসু, বিজয় সেন প্রভৃতি। তাদের চেষ্টায় ব্ৰহ্মের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠিত হয়। তাদের প্রভাব দেখে দ্বিতীয় বিশ্ব মহাযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪১ খ্রী. ব্রিটিশ সরকার তাদের গ্রেপ্তার করে সকলকে ইনসিন জেলে আটক রাখে। ১৯৪২ খ্রী. জাপানী সাময়িক বাহিনীর সঙ্গে ব্রহ্মসেনাদলের নেতৃত্বে আউঙ-সাঙ যখন রেঙ্গুনে প্রবেশ করেন, সে সময় অমর নাগ, মাধব মুন্সী প্রমুখ নিয়াঙ-লে-বিন নামে এক স্থানে অন্তরীণ অবস্থায় ডাক্তারখানা খুলে রোগীদের চিকিৎসা করে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলেন। ফলে ঐ গোলমালের অন্যান্য ভারতগামীদের সঙ্গে মিশে ২৯০ মাইল উত্তর-ব্রহ্মের পার্বত্য অরণ্যময় পথ দিয়ে মণিপুর, নাগাল্যান্ড হয়ে তারা ভারতে প্ৰবেশ করেন। এই দীর্ঘপথে তাঁরা রোগীর পরিচর্যাও করেছেন। ভারতে এসে A.R.P., বেসামরিক প্রতিরক্ষা প্রভৃতি কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। ঐ সময়ে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে গঠিত ‘বেঙ্গল মেডিক্যাল রিলিফ কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র ডাক্তার হিসাবে বিভিন্ন দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলে চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থাপনে সাহায্য করেন। রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য স্থাপিত Red Aid Centre-এর ভারপ্রাপ্ত ডাক্তার ছিলেন। ১৯৪৬ খ্রী. ব্ৰহ্মের অন্যান্য কিমীদের সঙ্গে ব্ৰহ্মদেশে ফিরে গিয়ে আউঙ-সাঙের নেতৃত্বে ‘অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট’-এ যোগ দেন। আউঙ-সাঙ ও তার ক্যাবিনেটের মন্ত্রীরা নিহত হলে যে বিপ্লবীরা গোপন ঘাঁটি থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যান। তিনি তাদের অন্যতম নেতা ছিলেন। অবশেষে এই দলের গোপন বাসস্থান ব্ৰহ্মসেনাবাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হলে সশস্ত্ৰ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন ও সংগ্রামরত অবস্থায় নিহত হন।
পূর্ববর্তী:
« অভয়াকর গুপ্ত
« অভয়াকর গুপ্ত
পরবর্তী:
অমর বসু »
অমর বসু »
Leave a Reply