অবনীনাথ মুখোপাধ্যায় (৩.৬.১৮৯১—২৮.১০.১৯৩৭) জব্বলপুর-মধ্যপ্রদেশ। আদি নিবাস-বাবুলিয়া, খুলনা। কলিকাতা থেকে উইভিং টেকনলজি পাশ করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য জাপান ও জার্মানী যান। ছাত্রাবস্থায় কলিকাতায় গণেশ দেউস্কর ও বিপিন পালের দ্বারা প্রভাবান্বিত হন। লিপজিগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের (জার্মানী) ছাত্র ছিলেন। এই সময়ে ড. অস্কার কোহনের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসেন। বহুকাল পরে মস্কোয় অধ্যাপক থাকাকালীন ডক্টরেট হন। বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিলের অ্যাসিস্ট্যান্ট উইভিং মাস্টার হয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। উচ্চতর শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে দেশে ফিরে ১৯১২ খ্রী–এভু ইউল কোম্পানীতে চাকরি নেন ও কিছুকাল পরে বৃন্দাবনের প্ৰেম মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। এখানে বিপ্লবী রাজা মহেন্দ্ৰপ্ৰতাপ ও সুরেন করের সাহচৰ্যলাভ ঘটে। ১৯১৪ খ্ৰী. বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ও বাঘা যতীনের সঙ্গে পরিচয় হয়। বাঘা যতীনের সহকারী নিযুক্ত হয়ে ১৯১৫ খ্ৰী. অস্ত্রসংগ্রহের জন্য জাপানে প্রেরিত হন। অবনীনাথ সান ইয়াৎ সেনের ঘনিষ্ঠ সহকমী ওয়েসীর সঙ্গে রাসবিহারীর পরিচয় করান। জার্মান দূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ফেরবার পথে! বিপ্লবীদের নাম-ঠিকানাসহ নোট বই সমেত পেনাং পুলিসের হাতে ধরা পড়ায় মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা হয়। ১৯১৭ খ্ৰী. কয়েকজন জার্মান যুদ্ধবন্দীর সঙ্গে সমুদ্র-স্নানের সময় পালিয়ে যান। তারপর মালয়ে রবার-বাগানে কুলির কাজ করেন ও একজন ওলন্দাজ ভদ্রলোকের ভৃত্য হিসাবে হল্যান্ড এবং জার্মানী যান। এখানে ড. ভূপেন দত্ত, বীরের চ্যাটার্জী, ক্ষিতীশপ্রসাদ প্রমুখের সঙ্গে ভারতের বাইরে বিপ্লব আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করেন। ১৯২০ খ্ৰী. ইংরেজ সরকার তীকে রাশিয়ায় আবিষ্কার করে ফেরত পাঠাবার দাবি জানান। এই বছর রাশিয়ান মহিলা রোজা ফিটিং-এর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৯২০ খ্রী. অক্টোবরে অন্যান্যদের সঙ্গে তাসখন্দে কম্যুনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক পার্টির সদস্য, তৃতীয় (কম্যুনিস্ট) আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্ৰেসে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে মেক্সিকো কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেন (১৯২০)। ১৯২২ খ্রী. রাশিয়ার দুৰ্ভিক্ষ-ত্ৰাণে ভারতীয় সমিতির তিনি সম্পাদক, ড. ভূপেন দত্ত চেয়ারম্যান ও বরকতুল্লা সভ্য ছিলেন। ঐ বছরেই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের মুক্তি বিষয়ে আলোচনা চালান এবং গোপনে ভারতে এসে বিভিন্ন বিপ্লবী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিখ্যাত বিপ্লবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২ মার্চ ১৯২৪ খ্ৰী। তিনি ভারতত্যাগের পূর্বে মাদ্রাজে ‘হিন্দুস্থান শ্রমিক ও কৃষক পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বার্লিনস্থ ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে ইংল্যাণ্ডের প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনান্ডের কাছে ভারতে এসে শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনে যোগদান করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। সমরকন্দ সোভিয়েতের ডেপুটি, সোভিয়েত বিজ্ঞান পরিষদ, কম্যুনিস্ট একাডেমি বিজ্ঞান প্রভৃতির কমি-সদস্য এবং প্ৰাচ্য বিভাগের সদস্য ও প্ৰাচ্য বিজ্ঞান বিভাগের সম্পাদক ছিলেন। পুত্ৰ গোরা ১৯৪০ খ্ৰী. সোভিয়েত সামরিক হাসপাতালে মারা যান। তার চরিত্র ও কার্যকলাপ বহুবিতর্কিত। ১৯২৪ খ্রী. ভারত সরকার জার্মান সরকারকে তত্রস্থ যে কয়জন ভারতীয় বিপ্লবীদের বহিষ্কারের ব্যাপারে চিঠি লেখালেখি করেছিলেন তিনি তাদের অন্যতম ছিলেন। রচিত গ্ৰন্থ: ‘Agrarian India’, ‘Malabar Uprising’, ‘Economic Situation in India and British Policy’ এবং মানবেন্দ্র রায়ের সহযোগে ‘India in Transition’.
পূর্ববর্তী:
« অবনীচন্দ্র মিত্র, চানুবাবু
« অবনীচন্দ্র মিত্র, চানুবাবু
পরবর্তী:
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর »
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর »
Leave a Reply