অনাদিকুমার দস্তিদার (১৯০৩ – ৪.২.১৯৭৪) শ্রীহট্ট। প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ও রবীন্দ্র সঙ্গীতের অন্যতম প্রচারক। বোলপুরে ব্রহ্মচর্যাশ্রমের ছাত্র হয়ে ১৯১২ খ্রী. তিনি শান্তিনিকেতনে যান। ১৯২০ খ্রী. এন্ট্রান্স পাশ করে পাঁচ বছর রবীন্দ্রনাথ ও দিনেন্দুনাথের কাছে গান শেখেন। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিক্ষা করেন ভীমরাও শাস্ত্রী, নকুলেশ্বর গোস্বামী ও কলিকাতার রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামীর কাছে। তিনি বীণা বাজাতেও শিখেছিলেন। শান্তিনিকেতনে অনেক নাটকের অভিনয়ে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯২৫ খ্রী. কলিকাতায় এসে তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীতকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ও দিনেন্দ্রনাথের পর তিনিই শান্তিনিকেতনের বাইরে প্রথম রবীন্দ্র সঙ্গীতের শিক্ষক। ১৯২৮ খ্রী. কলিকাতা কংগ্রেসে সঙ্গীত পরিচালনার ভার নিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি ‘সঙ্গীত সন্মিলনী’ ও ‘বাসন্তী বিদ্যাবীথি’তে শিক্ষকতা করেন। পরে ‘গীতবিতানে’র অধ্যক্ষ ও সবশেষে অধিকর্তা হয়েছিলেন। তিনি রেডিও, রেকর্ড ও সিনেমা-থিয়েটারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। গোড়া থেকেই তিনি গ্রামোফোন কোম্পানীতে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ট্রেনার। তাঁর হাতেই রেডিওর ব্লক প্রোগ্রামের শুরু বলা যায়। নিউ থিয়েটার্সে তাঁকে নিয়ে যান রাইচাঁদ বড়াল। বহল সিনেমায় তিনি ট্রেনার হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। বম্বে টকিজের সঙ্গেও তাঁর যোগ ছিল। থিয়েটার জগতে তাঁকে নিয়ে যান শিশিরকুমার ভাদুড়ী। শিশিরকুমারের ‘চিরকুমার সভা’ ও ‘শেষরক্ষা’ নাটকের তিনি সঙ্গীতপরিচালক ছিলেন। পরে স্টার থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। কিছুদিন উদয়শঙ্করের দলে থাকা কালে সেখানে বীণা বাজাতেন। ১৯৪৮ খ্রী. রথীন্দ্রনাথ ও ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর উদ্যোগে ‘স্বরলিপি সমিতি’ গঠিত হলে তিনি তার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৬৫ খ্রী. অবসর-গ্রহণের পর্ব পর্যন্ত তিনি এই পদে ব্রত থেকে বহু গানের স্বরলিপি রচনা করেছেন। বাঙলায় রবীন্দ্র সঙ্গীতকে জনপ্রিয় করে তুলতে তাঁর অবদান যথেষ্ট। তাঁরই পরিচালনায় চলচ্চিত্রে রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রথম ব্যবহার শুরু হয়। টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রদত্ত রবীন্দ্র তত্ত্ববিশারদ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« অনাথবন্ধু পাঁজা
« অনাথবন্ধু পাঁজা
পরবর্তী:
অনিরুন্ধ ভট্ট »
অনিরুন্ধ ভট্ট »
Leave a Reply