প্রেমাঙ্কুর আতর্থী (১ জানুয়ারি,১৮৯০-১৩ অক্টোবর,১৯৬৪) ছিলেন কথাশিল্পী, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। ১৮৯০ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুরে তাঁর জন্ম। পিতা মহেশচন্দ্র আতর্থী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের একজন প্রচারক ও লেখক। শৈশবকাল থেকেই প্রেমাঙ্কুর কলকাতায় বসবাস করেন। সেখানে ব্রাহ্ম বিদ্যালয়ে তাঁর প্রথম অধ্যয়ন শুরু হয়। পরে একে একে ডাফ স্কুল, কেশব একাডেমী, সিটি স্কুল এবং ব্রাহ্ম বয়েজ বোর্ডিং অ্যান্ড ডে স্কুলে তিনি পড়াশুনা করেন। কিন্তু কোথাও স্থায়িভাবে অধ্যয়ন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয় নি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা লাভ করা সম্ভব না হলেও নিজ চেষ্টায় তিনি দেশ-বিদেশের সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
প্রেমাঙ্কুর ছিলেন বাল্যকাল থেকেই কল্পনাপ্রবণ ও অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়। তাই শিক্ষালাভে ব্যর্থ হয়ে তিনি পালিয়ে বোম্বাই যান এবং ওস্তাদ করমতুল্লার নিকট সেতারবাদন শেখেন। কিছুকাল পরে কলকাতায় ফিরে তিনি চৌরঙ্গীর একটি ক্রীড়া সামগ্রীর দোকানে চাকরি করেন। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত হন এবং বৈকালী, যাদুঘর, হিন্দুস্তান, ভারতবর্ষ , সংকল্প, নাচঘর ও ভারতী পত্রিকায় কাজ করেন। আকাশবাণীর বাংলা মুখপত্র বেতারজগৎ-এর তিনিই ছিলেন প্রথম সম্পাদক।
প্রেমাঙ্কুর পুনর্জন্ম নামে একটি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। পরে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেন। প্রথমে লাহোরের একটি চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানে এবং পরে কলকাতার নিউ থিয়েটার্স লিমিটেডে তিনি চিত্র পরিচালনা করেন। তাঁর পরিচালিত ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে দেনা পাওনা, কপালকুণ্ডলা, দিকশূল, ভারত কী বেটী, সুধার প্রেম, ইহুদী কী লড়কী । এগুলির মধ্যে দেনা পাওনা প্রথম সবাক বাংলা চলচ্চিত্র।
প্রেমাঙ্কুরের সাহিত্যিক অবদান রম্যরস, ঘটনাবৈচিত্র্য ও রোমাঞ্চ দ্বারা ঐশ্বর্যমণ্ডিত। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা হলো: আনারকলি (১৯২৫), বাজীকর (১৯২৯), চাষার মেয়ে (১৯২৪), তখত তাউস, মহাস্থবির জাতক (৩ খণ্ড, ১৯৪৪-৫৪) ইত্যাদি। ১৯৬৪ সালের ১৩ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।
সূত্র: ৪
Leave a Reply