রানী চন্দ (জন্ম: ১৯১২ – মৃত্যূ: ১৯ জুন ১৯৯৭) একজন চিত্রশিল্পী এবং লেখিকা ।
রানী চন্দের জন্ম হয় মেদিনীপুরে । তাঁর বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মচারী কুলচন্দ্র দে এবং মা পূর্ণশশী । তাঁর ৪ বছর বয়েসে বাবা মারা যান । তাঁর বড় ভাই সরকারী চারু ও কারু মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মুকুল দের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সাথে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ । ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে গিয়ে কলাভবনে ভর্তি করে দেন । খুব কম সময়েই তিনি নন্দলাল বসুর প্রিয় ছাত্রী হয়ে ওঠেন । পরে তিনি অবনীন্দ্রনাথের কাছেও আঁকা শিখেছেন । অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তিনি যৌথভাবে বাল্মিকী প্রতিভা নাটকের সিরিজ এবং শান্তিনিকেতনের দৃশ্যাবলীর রঙিন ছবি আঁকেন । তাঁর আঁকা ছবিগুলির ভিতরে রাধার বিরহ এবং ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে লিনোকাটের উপর তাঁর একটি বই বহু প্রশংসা পেয়েছিল ।
১৯৩৩ (১৯৩৪ ?) খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের পৌরহিত্যে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব অনিল চন্দের সাথে মুম্বাইতে তাঁর বিবাহ হয় । তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেছিলেন । তিনি তাঁর জেল জীবনের অভিজ্ঞতা ফুটিয়ে তুলেছিলেন জেনানা ফটক বইতে । ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশের প্রথম মহিলা চিত্রশিল্পী হিসাবে দিল্লি ও মুম্বাইতে একক চিত্রপ্রদর্শনী করে খ্যাতিলাভ করেন । তাঁর আঁকা ছবি দিয়ে তৈরি অ্যালবাম খুব জনপ্রিয় হয়েছিল । দিল্লির রাষ্ট্রপতিভবন সহ তাঁর আঁকা ছবিগুলি বিভিন্ন রাজ্যের রাজভবনগুলিতেও স্থান পেয়েছে । চিনের প্রধানমন্ত্রী চুনকিং-এর আমলে ভারত সরকার তাঁর আঁকা ছবি সৌহার্দ্যের প্রতীক হিসাবে চিন সরকারের হাতে তুলে দেয় ।
সঙ্গীত এবং নৃত্যাভিনয়েও তিনি পারদর্শী ছিলেন । আশ্রমের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথ যখন দেশে বিদেশে অনুষ্ঠান করছেন তখন তিনিও সেইসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন । শ্রীলঙ্কায় শাপমোচন নৃত্যনাট্যে তিনি নাচে অংশ নিয়েছিলেন ।
স্বামী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে স্বামীর সাথে দীর্ঘ ২০ বছর দিল্লিতে ছিলেন । সেই সময়ে জওহরলাল নেহরু, বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত প্রমুখের সাহচর্য পান । ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি স্বামীর সাথে সাংস্কৃতিক দলের অন্যতম প্রতিনিধি হয়ে পূর্ব ইউরোপ এবং তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ায় ভ্রমণ করেন ।
রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরনা এবং নির্দেশে তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেছিলেন । রবীন্দ্রনাথের রোগশয্যায় মুখে মুখে বলা রচনার অনুলিপিকার ছিলেন তিনি । এ ছাড়া অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী এবং তাঁর দুটি স্মৃতিকথা জোড়াসাঁকোর ধারে এবং ঘরোয়া তাঁরই অনুলিখন । ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পূর্ণকুম্ভ গ্রন্থের জন্য তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন । তাঁর সাহিত্যকীর্তির জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ভুবনমোহিনী স্বর্ণপদক এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট ডিগ্রি দিয়ে সম্মানিত করে । তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্থ : আলাপচারী রবীন্দ্রনাথ, গুরুদেব, পথে ঘাটে, সব হতে আপন, আমার মায়ের বাপের বাড়ি, শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ প্রভৃতি ।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে ফিরে আসেন এবং তিনি সেখানেই আমৃত্যু কাটান ।
সূত্র: ৪
Leave a Reply