কালীপ্ৰসন্ন সিংহ (১৮৪০ – ২৪.৭.১৮৭০) জোড়াসাঁকো-কলিকাতা। নন্দলাল। দেওয়ান শান্তিরাম সংহের প্রপৌত্র, বহুগুণসমন্বিত এই জমিদার-সন্তান মাত্র ৩০ বছরের জীবনে ভাষা-সাহিত্যে ও সমাজ-জীবনে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেন। হিন্দু কলেজের অসম্পূর্ণ শিক্ষা ইংরেজ গৃহশিক্ষকের সাহায্যে পূর্ণ হয়। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ‘বিদ্যোৎসাহিনী সভা’ প্ৰতিষ্ঠা করে খ্যাতনামা বন্ধুদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চালাতেন। ক্রমে ‘বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা’ (১৮৫৫) এবং ‘বিদ্যোৎসাহিনী থিয়েটার’-এর (১৮৫৬) মাধ্যমে সাংস্কৃতিক জীবনে প্ৰবেশ করেন। ১৮৫৬ খ্রী. রামনারায়ণ অনুদিত ‘বেণীসংহার’ নাটকে অভিনয় করেন। ‘সর্বতত্ত্ব প্রকাশিকা’ (প্রাণিতত্ত্ব, ভুতত্ত্ব, শিল্প ও সাহিত্য-বিষয়ক), ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’, ‘পরিদর্শক’ প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ২৪ জুলাই ১৮৬১ খ্রী. ‘নীলদর্পণ’ নাটকের জন্য পাদরী লঙ সাহেবের জরিমানার হাজার টাকা তিনি আদালতে জমা দিয়েছিলেন। ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হরিশ মুখার্জী ও তার পরিবারবর্গকে এবং ‘মুখার্জীস ম্যাগাজিনে’র শম্ভুচন্দ্র, শিক্ষক রিচার্ডসন ও লঙ সাহেব প্রমুখদের নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। বিধবা-বিবাহকে জনপ্ৰিয় করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা এবং বহুবিবাহরোধ ও বারবনিতা-স্থানান্তরীকরণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার রচিত নাটক : ‘বাবু’ (১৮৫৪), ‘বিক্রমোর্বশী’ (১৮৫৭), ‘সাবিত্রীসত্যবান’ (১৮৫৮) ও ‘মালতীমাধব’ (১৮৫৯)। ছদ্মনামে লিখিত তার ‘হুতোম প্যাঁচার নক্সা’ (১৮৬২-৬৪) সমাজজীবনের কিঞ্চিৎ স্থূল ব্যঙ্গরূপ। সংস্কৃত শব্দবহুল পণ্ডিতী ভাষার বিরুদ্ধে সাহিত্যে কথ্য ভাষার প্ৰচলন করার জন্যও গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয়। বিদ্যাসাগরের উৎসাহে ও তত্ত্বাবধানে হেমচন্দ্ৰ ভট্টাচার্য, ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, নবীনকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ পণ্ডিতের সাহায্যে মূল সংস্কৃত মহাভারত বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করা তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি। সরকার কর্তৃক অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট ও ‘জাস্টিস অফ দি পীস’ নিযুক্ত হয়েছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়
« কালীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়
পরবর্তী:
কালীবর বেদান্তবাগীশ »
কালীবর বেদান্তবাগীশ »
Leave a Reply