শরৎচন্দ্র পণ্ডিত (২৭-৪-১৮৮১ –- এপ্রিল ১৯৬৮) হরিলাল। পৈতৃক নিবাস ধরমপুর-বীরভূম। পরে মুর্শিদাবাদের দহরপুরে ও আরও পরে জঙ্গীপুরে তাঁদের বাস। মাতুলালয় সিমলাদ্দি–বীরভূমে জন্ম। মফঃস্বল বাঙলার বলিষ্ঠ সাংবাদিকতার একটি ধারার স্রষ্টা। ‘দাদাঠাকুর’ নামে তিনি বাঙলার মানুষের কাছে সুপরিচিত। এন্ট্রান্স পাশ করে বর্ধমান রাজ কলেজে এফ.এ. ক্লাশে ভর্তি হলেও পরা শেষ করতে পারেন নি। দরিদ্র এই মানুষটি সামান্য সম্বল নিয়ে একটি হস্তচালিত মুদ্রাযন্ত্র স্থাপন করেন এবং সেখান থেকে ‘জঙ্গীপুর সংবাদ’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করে দেশের অন্যায়কারীদের আঘাত করেন। এই ছাপাখানার তিনি ছিলেন একাধারে কম্পোজিটার, প্রুফ রিডার, মেশিনম্যান সব কিছু। তাঁর ‘বিদূষক’ পত্রিকাটি দেশের রসিকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। কলিকাতায় গিয়ে তিনি নিজে রাস্তায় রাস্তায় কাগজ বিক্রি করতেন। চারিত্রিক তেজে তিনি আধুনিক কালের বিদ্যাসাগর ছিলেন। আশৈশব মোটা কাপড় পরেছেন এবং কোনদিনও পায়ে জুতো ব্যবহার করেন নি। নেতাজী সুভাষচন্দ্র তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর জীবনের কাহিনী নিয়ে গঠিত একটি বাংলা চলচ্চিত্রের নাম-ভূমিকায় শিল্পী ছবি বিশ্বাস রাষ্ট্রপতির পুরস্কার পান। কিন্তু ‘দাদাঠাকুর’ পুরস্কৃত হন নি—যদিও চলচ্চিত্রটি তাঁর জীবিতকালেই তৈরি হয়েছিল। তাঁর কাব্যপ্রতিভা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ছিল সহজাত। সে যুগে তাঁর ব্যাঙ্গাত্মক কবিতাগুলি সমাজের সকল শ্রেণীর অত্যাচারী ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে বার বার আঘাত হেনেছে। তিনি কলিকাতার রাজপথে তাঁর নিজের প্রকাশিত ‘বোতল পুরাণ’ নেচে নেচে গান গেয়ে বিক্রী করেছেন। হিন্দী ও ইংরেজীতে কবিতা রচনা করতে পারতেন। প্ৰত্যেক সহজ কথায় ‘পানিং’ করার দক্ষতা ছিল তাঁর। একবার বিধান রায়ের আমলে দেশে ধান হল না। ‘দাদাঠাকুর’ লিখলেন— ‘যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বি-ধান সেখানে ধান হবে কেমন করে।’ দরিদ্র বেশ ও তেজস্বী স্বভাব সত্ত্বেও কলিকাতার ধনী-দরিদ্র বিদগ্ধ মানুষ মাত্রেই তাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতেন। ‘বিদূষক’ পত্রিকা পরিচালনায় তাঁর সহকারী প্রসিদ্ধ হাসির গানের গায়ক ও লেখক নলিনীকান্ত সরকার তাঁর একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনী রচনা করেছেন।
পূর্ববর্তী:
« শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
« শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
পরবর্তী:
শরৎচন্দ্র রায়, রায়বাহাদুর »
শরৎচন্দ্র রায়, রায়বাহাদুর »
Leave a Reply