ত্রিদিব মিত্র (জন্ম ডিসেম্বর ৩১, ১৯৪০) বাংলা সাহিত্যে হাংরি আন্দোলনএর একজন কবি, এবং ওই আন্দোলনের দুটি পত্রিকা উন্মার্গ ও The Wastepaper সম্পাদনা করতেন । সহসম্পাদিকা ছিলেন তাঁর বান্ধবী আলো মিত্র ।
জীবনী
ত্রিদিব মিত্র হাওড়ার অভিজাত মিত্র পরিবারের সন্তান । সাহিত্যিক হবার আগ্রহে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর তিনি বাড়ি থেকে পলায়ন করেন, এবং ছয় মাসের বেশি ভারতের বিভিন্ন স্হানে নিস্কপর্দক ভিখারির জীবন কাটিয়ে বাড়ি ফেরেন । তিনি গৌরবর্ণ ও সুদর্শন ছিলেন বলে তাঁর এই অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি । এই স্মৃতি পরবর্তিকালে তাঁর সাহিত্যকর্মকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে । বাড়ি ফিরে তিনি স্নাতক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন । সহপাঠী আলো মিত্রের সঙ্গে পরিচয় হয়, এবং দুজনে মলয় রায়চৌধুরী ও দেবী রায়এর সংঙ্গে দেখা করে হাংরি আন্দোলন-এ যোগ দেন । হাংরি আন্দোলন ফুরিয়ে যাবার পর তিনি আলো মিত্রকে বিয়ে করেন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চপদে যোগ দেন ।
হাংরি আন্দোলন
পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক সমাজে বিশ শতকের ষাটের দশকে যে কয়জন হাংরি আন্দোলনকারী ঢেউ তুলতে পরেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ত্রিদিব মিত্র অন্যতম । তিনি এবং আলো মিত্র শ্মশানে, গোরস্তানে ও রেল স্টেশনে কবিতা পাঠের চল করেন । কলকাতার ভাটিখানা খালাসিটোলায় তাঁরা হাংরি আন্দোলনএর পত্রিকা উন্মার্গ প্রকাশের অনুষ্ঠান করে একযোগে খ্যাতি ও কুখ্যাতি লাভ করেন । হাংরি আন্দোলনএর লেখক সুবিমল বসাক-এর উপন্যাস ছাতামাথা তাঁরা প্রকাশ অনুষ্ঠান করেছিলেন এসপ্লানেড ট্রাম গুমটিতে ।হাংরি বুলেটিন হাতে হাতে বিলি করার কাজ প্রধানত তাঁরা দুজনেই করতেন । তাছাড়া, মুখোশ খুলে ফেলুন লেখা দানব, রাক্ষস, দেবতা, জন্তু – জানোয়ারের মুখোশ হাংরি আন্দোলন-এর পক্ষে তাঁরা দুজনেই রাজনীতিক, মন্ত্রী, প্রশাসক, সাংবাদিক, লেখক, সমালোচকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁরা দুজনেই পৌঁছে দিতেন । হাংরি আন্দোলন-এর পোস্টারগুলো কলকাতার দেয়ালে দেয়ালে লাগাতেন তাঁরা দুজন । হাংরি আন্দোলনকে বাঙালির সমাজে দ্রুত পরিছয় করিয়ে দেবার জন্য তাঁদের আবদান অকল্পনীয় ।
সাহিত্যধারা
ত্রদিব মিত্রের হত্যাকাণ্ড ও ঘুলঘুলি কবিতা দুটি দীর্ঘ । কাব্যগ্রন্হের কবিতা দুটিতে মলয় রায়চৌধুরী ও ফালগুনী রায়-এর স্বীকৃতীমুলক কবিতার আঙ্গিক অনুসরণ করা হয়েছে । তবে, তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার যাতনা কবিতা দুটিতে স্পষ্ট । যৌন চিত্রকল্পগুলিতে সেই আত্মজুজ্ঞাসা প্রতিফলিত হয়েছে । The Wastepaper পতীকার মাধ্যমে তিনি হাংরি আন্দোলনএর কবি ও লেখকদের অনুবাদ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় পৌঁছে দিয়েছিলেন । এই পত্রিকার জন্য অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় এবং আমেরিকা ও ইউরোপের লিটল ম্যাগাজিনগুলিতে হাংরি আন্দোলন-এর সংবাদ ও রচনা প্রকাশিত হয়েছিল, যা সে সময়ে আন্দোলনকারীদের বিশেষ প্রয়োজন ছিল, কেনা কলকাতার সাহিত্যিক মহলে তাঁরা তখনও স্বীকৃতি পাননি । ইউরোপ ও আমেরিকার (দক্ষিণ আমেরিকাসহ) কবি – লেখকরাও The Wastepaper পটিকায় অনুদিত হতেন । সম্ভবত এইটিই প্রথম প্রচেষ্টা যখন বিদেশি তরুণরা বাংলায় প্রকাশিত হলেন ।
সূত্রঃ ৪।
Leave a Reply