আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন (জানুয়ারি ১, ১৯৩০ – নভেম্বর ৩০, ১৯৯৮) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান লেখক ও বিজ্ঞান কর্মী। তবে তিনি আবদুল্লাহ আল-মুতী নামেই সমধিক পরিচিত।
জন্ম ও শিক্ষা
সিরাজগঞ্জ জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার এক গ্রামে আবদুল্লাহ আল-মুতীর জন্ম। তার মা হালিমা শরফুদ্দিন এবং বাবা শেখ মইন শরফুদ্দিন। ৫ ভাই ৬ বোনের মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মুতী সবার বড়। ১৯৪৫ সালে ঢাকার মুসলিম হাই স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন (এখনকার এসএসসি পরীক্ষা) পরীক্ষায় কলকাতা বোর্ডে ২য় স্থান লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে ১১ তম স্থান নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে আই এ পাশ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন। পদার্থ বিদ্যায় সম্মান সহ স্নাতক হোন ১৯৫২ সালে। বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়তার কারণে এই সময় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণী লাভ করলেও পরের বছর প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। এর পর শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে শিক্ষায় এম,এ এবং ১৯৬২ সালে পিএইচডি লাভ করেন। তার অভিসন্দর্ভ-এর শিরোনাম ছিল -Curriculum Changes in Pakistan with Special References to High School Science Education ।
তার প্রকাশিত বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা ২৭, অনুদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০, সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০। এছাড়াও কিছু পান্ডুলিপি রয়েছে, যার অনেক গুলো এখনও অপ্রকাশিত। রেডিও এবং টিভিতে তাঁর উপস্থাপিত অনুষ্ঠান বিষেশভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল।
তিনি লেখালেখি শুরু করেন ছাত্রজীবন থেকেই। বিজ্ঞানের জটিল, সূক্ষ বিষয়কে সহজ ভাষায় সর্বজনবোধ্য করে তোলার জন্য তার দক্ষতা ও সাফল্য ছিল তুলনাহীন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য অঙ্গনে অজস্র সংগঠন প্রতিষ্টানের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন আমৃত্যু। ১৯৪৭ সালে মুকুল ফৌজ আন্দোলনে যোগ দিয়ে পরবর্তী বছরে “মুকুল” নামে কিশোর পাক্ষিক পত্রিকা বের করেন। কেন্দ্রীয় কচি কাচার মেলা -এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ইত্তেফাক, আজাদ, মোহাম্মদী পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। জাতীয় শিশু-কিশোর সংস্থা সহ নানা সংঠনের উপদেষ্টা ছিলেন। এছাড়া তিনি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এশিয়েটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ (১৯৮৮-৯০), বাংলা একাডেমী, ঢাকা (১৯৮৬-৯০) ও বিজ্ঞান শিক্ষা সমিতিতে। এছাড়া তিনি আরো যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রধান উপদেষ্টা, প্রথম ঢাকা মহাকাশ উৎসব “বেক্সিমকো স্পেসফেস্ট ১৯৯৬’, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের দশম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি (১৯৯৮), উপদেষ্টা, দ্বিতীয় ঢাকা মহাকাশ উৎসব ‘স্পেসফেস্ট ১৯৯৯’। প্রধান উপদেষ্টা, ঢাকা প্রস্তাবিত স্পেস সেন্টার, উপদেষ্টা, মেঘনাদ সাহা বিজ্ঞান তথ্যকেন্দ্র ও গ্রন্থাগার (১৯৯৭-৯৯)। তিনি জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা সংস্কার ও আধুনিকরণের কর্মকান্ডে তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থেকে উজ্জ্বল অবদান রেখে গেছেন।
রাজনৈতিক জীবন
যৌবনে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৮ ও ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে রাজনীতি ছেড়ে দেন।
কর্ম জীবন
আবদুল্লাহ আল-মুতী কর্ম জীবন শুরু করেন রাজশাহী কলেজে শিক্ষক হিসাবে। ১৯৭৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব হিসেবে যোগ দেন। তারপর শিক্ষা প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহন করেন ১৯৮৬ সালে।
পুরস্কার
শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য টিকিউএ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার (১৯৬৯)
সাহিত্যের জন্য ইউবিএল পুরস্কার (১৯৬৯)
ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার ১৯৫৯
সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৭৫
বিজ্ঞান জনপ্রিয়করার জন্য ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক কলিঙ্গ পুরস্কার ১৯৮৩
শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক ১৯৮৫
স্বাধীনতা পদক ১৯৯৫
শিশু একাডেমি পুরস্কার
বিজ্ঞানবিষয়ক রচনার জন্য কুদরাত-ই-খুদা স্বর্ণ পদক ১৯৭৯
শিক্ষার জন্য জিয়াউর রহমান জাতীয় পুরস্কার ১৯৮১
শিশু সাহিত্যের জন্য শহীদুল্লাহ কায়সার স্মৃতি পুরস্কার ১৯৮২
শিশু সাহিত্যের জন্য শাব্বির ফাউন্ডেশন পুরস্কার ১৩৮৩
আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৫
বিজ্ঞানে কাজী মাহবুব উল্লাহ স্বর্ণপদক ১৯৮৭
শিশু সাহিত্যে বিজ্ঞানের জন্য অগ্রণী ব্যাংক পুরুস্কার১৩৮৮, ১৩৯৪, ১৪০২
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ কীর্তির জন্য ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী পুরস্কার ১৪০০
প্রযুক্তি জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে আইডিই পদক ১৯৯৩
প্রকাশিত গ্রন্থ
শিশু ও বিজ্ঞান-বিষয়ক
এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে (১৯৫৫)
অবাক পৃথিবী (১৯৫৫)
আবিষ্কারের নেশায় (১৯৬৯)
রহস্যের শেষ নেই (১৯৬৯)
বিজ্ঞান ও মানুষ (১৯৭৫)
জানা-অজানার দেশে (১৯৭৬)
সাগরের রহস্যপুরী (১৯৭৬)
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে (১৯৮০)
এ যুগের বিজ্ঞান (১৯৮১)
মেঘ বৃষ্টি রোদ (১৯৮১)
ফুলের জন্য ভালোবাসা (১৯৮২)
সোনার এই দেশ (১৯৮৩)
তারার দেশের হাতছানি (১৯৮৪)
বিচিত্র বিজ্ঞান (১৯৮৫)
বিপন্ন পরিবেশ (১৯৮৫)
প্রাণলোক: নতুন দিগন্ত (১৯৮৬)
বিজ্ঞানের বিস্ময় (১৯৮৬)
ছবিতে আমাদের পরিবেশ (১ম ভাগ-১৯৮৭, ২য় ভাগ-১৯৯০)
টেলিভিশনের কথা (১৯৮৮)
বিজ্ঞান-জিজ্ঞাসা (১৯৮৮)
কীটপতঙ্গের বিচিত্র জগত (১৯৮৮)
কাজী মোতাহার হোসেন (১৯৮৮)
বিজ্ঞান এগিয়ে চলে (১৯৯১)
চোখ মেলে দেখ (১৯৯২)
ফারিয়া-নাদিয়ার মজার সফর (১৯৯৬)
পরিবেশের সংকট ঘনিয়ে আসছে (১৯৯৬)
আজকের বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ (১৯৯৬)
মহাকাশে কী ঘটছে (১৯৯৭)
শিক্ষা-বিষয়ক
শিক্ষা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৭৫)
শিক্ষা ও বিজ্ঞান- নতুন দিগন্ত (১৯৯১)
আমাদের শিক্ষা কোন পথে (১৯৯৬)
অনুবাদ
আকাশের সঙ্গে মিতালী (১৯৫৬)
মহাবীর পরমাণু (১৯৫৭)
রহস্যটা জানতে হবে (১৯৫৮)
সেকালের জীবজন্তু (১৯৫৮)
তাপ (১৯৫৮)
আলো (১৯৬১)
শিক্ষা ও জাতীয় উন্নয়ন (১৯৬৫)
বিশ্বসৃষ্টির মালমসলা (১৯৬৫)
পরমাণুর রাজ্যে (মিনা শরফুদ্দিনের সঙ্গে, ১৯৭১)।
অপ্রকাশিত গ্রন্থ
কম্পিউটারের আশ্চর্য জগত
সম্পাদনা
আধুনিক বিজ্ঞান (১৯৬৮)
সাধারণ বিজ্ঞান ২য় খণ্ড (১৯৮৩)
বাংলাদেশের বিজ্ঞান চিন্তা (১৯৮৮)
আজকের বিজ্ঞান, সংবাদপত্রে বাংলাভাষা (যুগ্ম-সম্পাদনা, ১৯৮৯)
Education for All (1968)
Education is Progress (1969)
Improvement of Teacher Education (1969)
Cooperation of Education, Science and Culture in South Asian Region (Joint Editor, 1987)
Role of UNESCO in Scientific and Technological Development (Joint Editor, 1988)
বাংলা একাডেমীর বিজ্ঞান বিশ্বকোষ (প্রধান সম্পাদক, ১ম খণ্ড)
মাসিক কম্পিউটার বিচিত্রা (প্রধান সম্পাদক)
শিশু একাডেমীর শিশু বিশ্বকোষ (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ)
————————–
সূত্রঃ ৪
Leave a Reply