দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯.৭.১৮৬৩ – ১৭.৫.১৯১৩) কৃষ্ণনগর-নদীয়া। কৃষ্ণনগর রাজবংশের দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্ৰ। প্ৰখ্যাত কবি ও নাট্যকার। অগ্ৰজদ্বয় রাজেন্দ্ৰলাল ও হরেন্দ্রলাল সাহিত্যিকরূপে পরিচিত ছিলেন। তার এক বৌদি মোহিনী দেবীও বিদুষী লেখিকা ছিলেন। সুকণ্ঠ গায়ক ও গীতিকার পিতার প্রভাবে তিনি অল্পবয়সেই গায়করূপে পরিচিত হন। হুগলী কলেজ থেকে বি-এ এবং ১৮৮৪ খ্রী. প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ইংরেজীতে এম.এ. পাশ করেন। পাঠ্যাবস্থায় রচিত প্ৰথম কাব্যগ্রন্থ ‘আৰ্য্যগাথা’ ১৮৮২ খ্ৰী. প্রকাশিত হয়। কিছুদিন শিক্ষকতার পর সরকারি বৃত্তিসহ কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য বিলাত যান। এই প্রবাসের কাহিনী অগ্ৰজদ্বয় সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘পতাকা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হত। এখানে পাশ্চাত্য সঙ্গীত শেখেন ও ‘Lyrics of Ind’ নামে ইংরেজী কাব্যগ্রন্থ প্ৰকাশ করেন। বিলাতের প্রসিদ্ধ অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের অভিনয় ও রঙ্গালয়ের কলাকৌশল সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা তার পরবর্তী জীবনে কাজে লেগেছিল। তিন বছর পর দেশে ফিরে প্রায়শ্চিত্ত করতে অস্বীকৃত হওয়ায় তাকে সামাজিক উৎপীড়ন সহ্য করতে হয়। এই সময়ের ক্ষোভ তাঁর রচিত ‘একঘরে’ পুস্তিকায় প্রতিফলিত হয়। ১৮৮৬ খ্রী. সরকারি কাজে যোগ দেন। ১৮৮৭ খ্রী. বিখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক প্ৰতাপচন্দ্ৰ মজুমদারের কন্যা সুরবালা দেবীকে বিবাহ করেন। চাকরি-জীবনে কখনও সেটেলমেন্ট অফিসার, কখনও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, কখনও আবগারী বিভাগের প্রথম পরিদর্শক, কখনও-বা ল্যান্ড রেকর্ডস অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার বিভাগে সহকারী ডিরেক্টররূপে কাজ করেন। স্বাধীনচেতা হওয়ায় কর্মজীবন সুখের হয়নি। চাকরির শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে অবসর নেন। ১৯০৫ খ্রী ‘পূৰ্ণিমা সম্মেলন’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থাটি তৎকালীন শিক্ষিত ও সংস্কৃতিসেবী বাঙালীর তীর্থক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল। ‘ইভনিং ক্লাব’ নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও এই সময়ে যুক্ত হন। এই ক্লাবের প্রকাশ্য অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন। জীবনের শেষ অধ্যায়ে দীর্ঘদিনের বন্ধু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মতানৈক্য হয়। অল্প বয়সে কাব্যরচনা শুরু করে ১৯০৩ খ্রী. পর্যন্ত প্ৰধানত কাব্যই রচনা করেন। এই সময়ের প্রকাশিত গ্ৰন্থ প্ৰায় ১২টি। এর মধ্যে প্রহসন, কাব্যনাট্য, ব্যঙ্গ ও হাস্যরসাত্মক কবিতাও আছে। শেষ দশ বছর প্রধানত নাটক রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। পৌরাণিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক ইত্যাদি সবরকম নাটক-রচনাতেই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। স্বদেশী আন্দোলনে চিত্তের যে অভিনব জাগরণ ঘটেছিল তিনি তার ঐতিহাসিক নাটকগুলিতে তারই রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই সময়ের মোট রচনা ১৬টি। প্ৰবন্ধকার হিসাবে তার বিখ্যাত রচনা ‘কালিদাস ও ভবভূতি’। ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকা প্ৰকাশ আক্ষরিক অর্থে তার কীর্তি, তবে প্ৰথম সংখ্যা প্রকাশের পূর্বেই তিনি পরলোকগমন করেন। তার হাসির গান এক সময় বাঙালীদের নির্মল আনন্দ দিয়েছে। সঙ্গীত-রচনায় দেশীয় ও পাশ্চাত্য সুর ব্যবহার করেছেন। তার রচনার মধ্যে ‘হাসির গান’, ‘চন্দ্ৰগুপ্ত’, ‘সাজাহান’, ‘মেবার পতন’, ‘প্ৰতাপসিংহ’ সমধিক প্ৰসিদ্ধ।
পূর্ববর্তী:
« দ্বিজেন্দ্রলাল গঙ্গোপাধ্যায়, ড.
« দ্বিজেন্দ্রলাল গঙ্গোপাধ্যায়, ড.
পরবর্তী:
দ্বিজেন্দ্ৰকুমার সান্যাল »
দ্বিজেন্দ্ৰকুমার সান্যাল »
Leave a Reply