অজিত কুমার দত্ত (জন্ম: ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯০৭ – মৃত্যু: ৩০শে ডিসেম্বর, ১৯৭৯) বাঙালি সাহিত্যিক এবং অধ্যাপক। ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন কলকাতায়।
অজিত দত্ত ১৯০৭ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে (বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলা) এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র চার বছর বয়সে তার পিতা অতুলকুমার দত্ত মারা যান। তার মা হেমালিনীদেবী ছিলেন সাহিত্য অনুরাগী। ১৯২৪ সালে ঢাকার কিশোরীলাল জুবিলী স্কুল থেকে অজিত দত্ত প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় এবং জগন্নাথ কলেজে বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯২৬ সালে তিনি কলকাতা চলে যান এবং বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার বড় ভাই মারা গেলে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগে ভর্তি হন। অজিত দত্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে বি.এ এবং ১৯৩০ সালে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
অজিত দত্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী পদে যোগদান করে তার কর্মজীবন শুরু করেন। কিছুদিন পরেই তিনি কলকাতায় রিপন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৩৪ সালে স্কুল ছেড়ে তিনি রিপন কলেজে যোগদান করেন। ১৯৩৬ সালে রিপন কলেজ ছেড়ে দিয়ে ইন্ডিয়ান টি মার্কেট এক্সপানশন বোর্ডে এসিস্ট্যান্ট পাবলিসিটি অফিসার পদে যোগ দেন এবং সেখানে তিনি ১০ বছর চাকরি করেন। এখানে পদোন্নতি না হওয়ায় চাকরি ছেড়ে ক্যালকাটা ন্যাশনাল ব্যাংকের অধিকর্তা শচীন ভট্টাচার্যের ১২/১৪টি কনসার্নের পাবলিসিটি অফিসার হন। এখানেও ১০ বছর চাকরি করে ১৯৫৬ সালের ২১শে আগস্ট তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপনায় যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী তিনি বিভাগীয় প্রধান হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন।
১৯৩০ সালে অজিত দত্তের প্রথম কাব্যগ্রন্থ কুসুমের মাস প্রকাশিত হয়। তিনি ছিলেন বুদ্ধদেব বসু সতীর্থ। তিনি বুদ্ধদেব বসুর সাথে যৌথভাবে প্রগতি নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। পরে কল্লোল সাহিত্য গোষ্ঠী তে যোগ দেন। অজিত দত্ত নিয়মিত কল্লোল পত্রিকায় লেখালেখি করতেন, তিরিশের দশকে কল্লোল অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা সাহিত্য পত্রিকা। ১৯৪৬ সালে তার নষ্ট চাঁদ প্রকাশের পরের বছর দেশ পত্রিকায় রৈবত ছন্দ নামে ধারাবাহিকভাবে তার মন পবনের নাও প্রকাশিত হয়। অজিত দত্ত সমসাময়িক বাংলা কবিতা, ছন্দ চিন্তা, রবীন্দ্র বিষয়ক ভাবনা, বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকের রচনার মূল্যায়ন, শিল্পসাহিত্য ভাবনা এবং শিশুসাহিত্য সম্পর্কিত ৫০টি প্রবন্ধ লেখেন। বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত জনপ্রিয় সাহিত্য পত্রিকা কবিতা গোড়াপত্তনেও অজিত দত্তের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
কাব্য গ্রন্থঃ
কুসুমের মাস (১৯৩০)
পাতাল কন্যা (১৯৩৮)
নষ্ট চাঁদ (১৯৪৫)
পূর্ণনবা (১৯৪৬)
ছড়ার বই (১৯৫০)
ছায়ার আলপনা (১৯৫১)
জানালা (১৯৫৯)
কবিতা-সংগ্রহ (১৯৫৯)
শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৭০)
সাদা মেঘ কালো পাহাড় (১৯৭১)
প্রবন্ধগ্রন্থঃ
জনান্তিকে (১৯৪৯)
মন পবনের নাও (১৯৫০)
সরস প্রবন্ধ (১৯৬৮)
বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস (প্রবন্ধ, ১৯৬০)
কথা-ভারতী (অনুবাদ)
দুর্গাপূজার গল্প (অনুবাদ)
রম্য রচনাঃ
জনান্তিকে (১৯৪৯)
মনপবনের নাও (১৯৫০)
সরস প্রবন্ধ (১৯৬৮)
অন্যান্যঃ
বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস (প্রবন্ধ, ১৯৬০)
কথা-ভারতী (অনুবাদ)
দুর্গাপূজার গল্প (অনুবাদ)
[উইকি]
Leave a Reply