হুমায়ুন আজাদ (জন্ম: ২৮শে এপ্রিল, ১৯৪৭ (১৪ই বৈশাখ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ), রাড়িখাল, বিক্রমপুর; মৃত্যু: ১১ই আগস্ট, ২০০৪, মিউনিখ, জার্মানি) একজন বাংলাদেশী কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং কলাম প্রাবন্ধিক।
ব্যক্তিগত জীবন:
হুমায়ুন আজাদ রাড়িখালের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ইন্সটিটিউশন থেকে ১৯৬২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। মেধাবী ছাত্র আজাদ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন; উভয় ক্ষেত্রেই তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯৭৬ সালে তিনি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল বাংলা ভাষায় সর্বনামীয়করণ। তাঁর স্ত্রী লতিফা কোহিনুর। তাঁর দুই কন্যা মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ এবং একমাত্র পুত্র অনন্য আজাদ। ২০০৪ সালে হুমায়ুন আজাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা হয়, যার দায়িত্ব পরবর্তীতে জমিয়াতুল মুজাহেদীনের জঙ্গী সন্ত্রাসবাদীরা স্বীকার করে। হুমায়ুন আজাদ ১১ আগষ্ট ২০০৪ সালে জার্মানির মিউনিখ শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
ভাষাবিজ্ঞানী হুমায়ুন আজাদ:
হুমায়ুন আজাদ যখন ৬০-এর দশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা পড়ছিলেন, তখন ভাষাবিজ্ঞানে চম্স্কি-উদ্ভাবিত সৃষ্টিশীল রূপান্তরমূলক ব্যাকরণ তত্ত্বটি আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল। আজাদই প্রথম এই তত্ত্বের কাঠামোর উপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার গবেষণার একটি অবহেলিত ক্ষেত্র বাক্যতত্ত্ব নিয়ে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেন ও বাংলা ভাষার গবেষণাকে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানে উত্তরণ ঘটান। আজাদের পিএইচডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল Pronominalization in Bengali (অর্থাৎ বাংলা সর্বনামীয়করণ)। পরবর্তীতে এটি একই শিরোনামের ইংরেজি বই আকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয়। এর পর ১৯৮৪ সালে আজাদ বাংলা বাক্যতত্ত্বের উপর বাক্যতত্ত্ব নামে একটি বাংলা বই প্রকাশ করেন। একই সালে তিনি বাঙলা ভাষা শিরোনামে দুই খণ্ডের একটি সঙ্কলন প্রকাশ করেন, যেটিতে বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপর বিগত শতাধিক বছরের বিভিন্ন ভাষাবিদ ও সাহত্যিকের লেখা গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতাত্ত্বিক রচনা স্থান পায়। এই তিনটি গ্রন্থই ছিল তৎকালীন বাংলা ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা। পরবর্তীতে আজাদ তুলনামূলক-ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান ও অর্থবিজ্ঞানের উপর দুইটি সংক্ষিপ্ত প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক লেখেন। ৯০-এর দশকের শেষের দিকে আজাদ বাংলা ভাষার একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রচনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং এই ব্যাপারে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যাপক পরিকল্পনাও যে তিনি করছিলেন, তাঁর বিভিন্ন উক্তিতে তার প্রমাণ মেলে। তবে দুর্ভাগ্যবশত তিনি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি।
কবিতা:
অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩)
জ্বলো চিতাবাঘ (১৯৮০)
সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে (১৯৮৫)
যতোই গভীরে যাই মধু যতোই উপরে যাই নীল (১৯৮৭)
আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে (১৯৯০)
হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৩)
আধুনিক বাংলা কবিতা (১৯৯৪)
কাফনে মোড়া অশ্রু বিন্দু (১৯৯৮)
কাব্য সংগ্রহ (১৯৯৮)
পেরোনোর কিছু নেই (২০০৪)
কথাসাহিত্য:
ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল (১৯৯৪)
সব কিছু ভেঙে পড়ে (১৯৯৫)
মানুষ হিশেবে আমার অপরাধসমূহ (১৯৯৬)
যাদুকরের মৃত্যু (১৯৯৬)
শুভব্রত, তার সম্পর্কিত সুসমাচার (১৯৯৭)
রাজনীতিবিদগণ (১৯৯৮)
কবি অথবা দন্ডিত অপুরুষ (১৯৯৯)
নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু (২০০০)
ফালি ফালি ক’রে কাটা চাঁদ (২০০১)
শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা (২০০২)
১০,০০০, এবং আরো একটি ধর্ষণ (২০০৩)
একটি খুনের স্বপ্ন (২০০৪)
পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৪)
সমালোচনা:
শিল্পকলার বিমানবিকীকরণ ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৮৮)
ভাষা-আন্দোলন: সাহিত্যিক পটভূমি (১৯৯০)
নারী (১৯৯২)
প্রতিক্রিয়াশীলতার দীর্ঘ ছায়ার নিচে (১৯৯২)
নিবিড় নীলিমা (১৯৯২)
মাতাল তরণী (১৯৯২)
নরকে অনন্ত ঋতু (১৯৯২)
জলপাই রঙের অন্ধকার (১৯৯২)
রবীন্দ্র প্রবন্ধ/রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা (১৯৯৩)
শামসুর রাহমান/নিঃসঙ্গ শেরপা (১৯৯৩)
সীমাবদ্ধতার সূত্র (১৯৯৩)
আধার ও আধেয় (১৯৯৩)
আমার অবিশ্বাস (১৯৯৭)
পার্বত্য চট্টগ্রাম : সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা (১৯৯৭)
মহাবিশ্ব (২০০০)
দ্বিতীয় লিঙ্গ (মূল : সিমোন দ্য বোভোয়ার) (২০০১)
আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম (২০০৩)
ধর্মানভূতির উপকথা ও অন্যান্য (২০০৪)
ভাষাবিজ্ঞান:
Pronominalization in Bengali (১৯৮৩)
বাঙলা ভাষার শত্রুমিত্র (১৯৮৩)
বাক্যতত্ত্ব (১৯৮৪)
বাঙলা ভাষা (প্রথম খন্ড) (১৯৮৪)
বাঙলা ভাষা (দ্বিতীয় খন্ড) (১৯৮৫)
তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান (১৯৮৮)
অর্থবিজ্ঞান (১৯৯৯)
কিশোরসাহিত্য:
লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী (১৯৭৬)
ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা (১৯৮৫)
কতো নদী সরোবর বা বাঙলা ভাষার জীবনী (১৯৮৭)
আব্বুকে মনে পড়ে (১৯৮৯)
বুকপকেটে জোনাকিপোকা (১৯৯৩)
আমাদের শহরে একদল দেবদূত (১৯৯৬)
অন্ধকারে গন্ধরাজ (২০০৩)
Our Beautiful Bangladesh (২০০৪)
অন্যান্য:
হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ (১৯৯২)
সাক্ষাৎকার (১৯৯৪)
আততায়ীদের সঙ্গে কথোপকথন (১৯৯৫)
বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় (১৯৯৭)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রধান কবিতা (১৯৯৭)
সূত্রঃ ৪
Leave a Reply