হাসান হাফিজুর রহমান (জুলাই ১৪, ১৯৩২ – এপ্রিল ১, ১৯৮৩) বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবি, সাংবাদিক ও সমালোচক ছিলেন । ১৪ জুলাই ১৯৩২ সালে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহন করেন । তাঁর পূর্বপুরুষ জামালপুর জেলার অন্তর্গত কুলকান্দি গ্রামে বাস করতেন ।
কর্মজীবন
হাসান হাফিজুর রহমানের পেশাজীবন খুব বৈচিত্রময় ছিলো । সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকায় ১৯৫২ সালে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন । এরপর তিনি একাধারে সওগাত (১৯৫৩), ইত্তেহাদ (১৯৫৫-৫৭), দৈনিক পাকিস্তান (১৯৬৫) এবং স্বাধীনতার পর দৈনিক বাংলায় কাজ করেন । সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ১৯৫৭-১৯৬৪ সাল পর্যন্ত জগন্নাথ কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন । এছাড়াও তিনি ১৯৭৩ সালে মস্কোস্থ বাংলাদেশ এ্যামবাসিতে প্রেস কাউন্সিলর পদে দায়িত্ব পালন করেন ।
সাহিত্য
লেখক হিসেবে হাসান হাফিজুর রহমানের আত্নপ্রকাশ ঘটে ছাত্রঅবস্থাতেই । ১৯৪৬ সালে তিনি যখন স্কুলছাত্র তখন তার ছোট গল্প “অশ্রুভেজা পথ চলাতে” প্রকাশিত হয় সওগাত পত্রিকায় । এরদুবছর পর সোনার বাংলায় তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় । ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অবদান রাখেন । একুশের চেতনার ওপর ভিত্তি করে তাঁর কবিতা অমর একুশে প্রকাশিত হয় ১৯৫২ সালেই । এটিসহ আরোও কিছু লেখা একত্র করে ১৯৫৩ সালে তিনি তার প্রথম বই একুশে ফেব্রুয়ারী প্রকাশ করেন ।
রাজনৈতিক কর্মকান্ড
হাসান হাফিজুর রহমান বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক কাজে জড়িত ছিলেন । ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন । সেবছর তিনি নাট্য চক্রের সভাপতি হন এবং দুটি গুরুত্বপূর্ন প্রবন্ধ রচনা করেন । সেগুলো হলো, কবিতার বিষয়বস্তু ও আধুনিক কবিতার লক্ষন । ষাটের দশকে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক বাংলার অক্ষর বদলিয়ে আরবি অক্ষরে রূপান্তরের ষড়যন্ত্র ও রেডিও টিভিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম প্রচারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার দাবিতে জোরালো আন্দোলনে অংশ নেন ।
হাসান হাফিজুর রহমান কম্যুনিস্ট ভাবধারায় বিশ্বাসী ছিলেন । তিনি বাঙালী কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে অবিচল আস্থাশীল ছিলেন । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশ নেন ।
উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম
সম্ভবতঃ হাসান হাফিজুর রহমানের সবচেয়ে মূল্যবান কাজ হিসেবে তার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ১৬ খন্ডের দলিলপত্রকেই (১৯৮২-৮৩) ধরা হয় । অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে বিমুখ প্রান্তর (১৯৬৩), আর্ত শব্দাবলী (১৯৬৮), আধুনিক কবি ও কবিতা (১৯৬৫), মূল্যবোধের জন্যে (১৯৭০), প্রতিবিম্ব (১৯৭৬), আরো দুটি মৃত্যু (১৯৭০) উল্লেখযোগ্য । বাংলা ভাষায় হোমারের ওডিসি অনুবাদও করেছেন তিনি ।
পুরস্কার ও পদক
হাসান হাফিজুর রহমান তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন । এর মধ্যে পাকিস্তান লেখক সংঘ পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার (১৯৬৭), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭১), সুফি মোতাহার হোসেন স্মারক পুরস্কার (১৯৭৬), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), সওগাত সাহিত্য পুরস্কার ও নাসিরুদ্দিন স্বর্নপদক (১৯৮২) এবং মরোনোত্তর একুশে পদক (১৯৮৪) উল্লেখযোগ্য ।
মৃত্যু
হাসান হাফিজুর রহমান ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল মস্কো সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন ।
Leave a Reply