সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক । কর্ণেল তাঁর সৃষ্ট একটি গোয়েন্দা চরিত্র ।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ খোশবাসপুর গ্রামে ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন ৷ প্রথম জীবনে বাড়ি থেকে পলাতক কিশোরের জীবন অতিবাহিত করেছেন ৷ রাঢ় বাংলার লোকনাট্য “আলকাপের” সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাচ-গান-অভিনয়ে নিমজ্জিত হয়ে জেলায় জেলায় ঘুরেছেন ৷ আবার একদিন সহসা সব ছেড়ে তিনি শুনলেন নিজের নাড়ির আওয়াজ – তাঁর ভেতরে অন্তর্নিহিত লেখকসত্তার ধ্বনি ৷শুরু হলো সাহিত্যের সাধনা ৷ তাঁর “ইন্তি, পিসি ও ঘাটবাবু”, “ভালোবাসা ও ডাউনট্রেন”, “তরঙ্গিনীর চোখ”,”জল সাপ ভালোবাসা”, “হিজলবিলের রাখালেরা”, “রণভূমি”, “উড়োপাখির ছায়া”, “রক্তের প্রত্যাশা”, “মৃত্যুর ঘোড়া”, “গোঘ্ন”, “রানীরঘাটের বৃত্তান্ত”, ইত্যাদি অসংখ্য ছোটগল্পের জন্য বিশ্বসাহিত্যের দরবারে স্থায়ী আসন পেয়েছেন ৷
সিরাজের প্রথম মুদ্রিত উপন্যাস – “নীলঘরের নটী” প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকমহলে সাড়া পড়ে যায় ৷ একের পর এক প্রকাশিত হয় “পিঞ্জর সোহাগিনী”, “কিংবদন্তীর নায়ক”,”হিজলকন্যা”,”আশমানতারা”, “উত্তর জাহ্নবী”, “তৃণভূমি”, “প্রেমের প্রথম পাঠ”, “বন্যা”,”নিশিমৃগয়া”,”কামনার সুখদুঃখ”, “নিশিলতা”, “এক বোন পারুল”, “কৃষ্ণা বাড়ি ফেরেনি”, “নৃশংস”,”রোডসাহেব”, “জানগুরু” ইত্যাদি ইত্যাদি ৷তাঁর গল্প ও একাধিক গ্রন্থ ভারতের সমস্ত স্বীকৃত ভাষায় অনূদিত হয়েছে, এমনকি ইংরেজি তো বটেই, বিশ্বের বহু ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে ৷
ক্ষুদে ও কিশোর পাঠকদের দাবি মেটাতে তিনি সৃষ্টি করলেন “গোয়েন্দা কর্নেল” নামে একজন রহ্স্যময় চরিত্র , যাঁর মাথা জোড়া টাক, ঠোঁটে চুরুট, অবসরপ্রাপ্ত মিলিটারি অফিসার, এখন প্রজাপতি ও পাখি দেখতে ভালোবাসেন ৷ অথচ তিনি অনেক অপরাধ ও হত্যার কিনারা করে শখের গোয়েন্দাগিরি করেন ৷”গোয়েন্দা কর্নেল” পাঠকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ৷”গোয়েন্দা কর্নেল সমগ্র” খন্ডে খন্ডে প্রকাশিত হয়ে চলেছে ৷
সিরাজ কলকাতায় পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন ষাটের দশকের শুরুতে ৷ দীর্ঘদিন আনন্দবাজার পত্রিকায় সাংবাদিক হিসাবে চাকরি ও লেখালেখি সমানতালে চালিয়ে গেছেন ৷ তাঁর জ্ঞান ও অধীত বিদ্যাসমূহ তাঁকে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসাবে বিদ্বানসমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে ৷ইতিহাস,সমাজতত্ত্ব , নৃতত্ত্ব, পুরাতত্ত্ব, বিজ্ঞান, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব – সব বিষয়েই তাঁর বিস্ময়কর জ্ঞান ও বিদ্যার গভীরতা তাঁকে পন্ডিতমহলে উচ্চ আসন এনে দিয়েছে ৷
তিনি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা প্রদত্ত আকাদেমি পুরস্কার, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা প্রদত্ত নরসিংদাস পুরস্কার, রাজ্য সরকার দ্বারা প্রদত্ত বঙ্কিম পুরস্কার, এছাড়া ভূয়ালকা পুরস্কার, আরও অনেক অনেক পুরস্কার, সম্মান, পদক প্রাপ্ত হয়েছেন ৷তাঁর অনেক কাহিনী চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে ৷তাঁর “মানুষ ভূত” চলচ্চিত্র ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে মঞ্চে ক্রমাগত অভিনীত হয়ে চলেছে ৷তিনি আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা আমন্ত্রিত হয়ে আমেরিকা ঘুরে এসেছেন ৷
সূত্রঃ ৪
Leave a Reply