বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১ (১২-৯-১৮৯৪ – ১-৯-১৯৫০) ব্যারাকপুর-বনগ্রাম-চব্বিশ পরগনা। মহানন্দ। পিতারপেশা ছিল। কথকতা ও পৌরোহিত্য। খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক। বাল্য ও কৈশোর কাটে দারিদ্র্য, অভাব ও অনটনের মধ্যে। ১৯১৪ খ্রী. ম্যাট্রিক, ১৯১৬ খ্রী.আই.এ এবং ১৯১৮ খ্রী. ডিস্টিংশনে বি-এ, পাশ করে এম.এ ও ল ক্লাসে ভর্তি হন, কিন্তু পড়া অসমাপ্ত রেখে প্ৰথমে জাঙ্গীপাড়ার স্কুলে ও পরে সোনারপুর হরিনাভি গ্রামে শিক্ষকতা করেন (১৯২০ – ২২)। মাঝে কিছুদিন প্ৰথমে গোরক্ষিণী সভার প্রচারক, পরে খেলাৎ ঘোষের বাড়িতে সেক্রেটারী, গৃহশিক্ষক এবং এস্টেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজাররূপে ভাগলপুর সার্কেলে কাজ করলেও মৃত্যুকাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত গোপালনগর স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। শৈশব থেকেই পল্লী-প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা ‘উপেক্ষিতা’ নামে গল্প জানুয়ারী ১৯২২ খ্রী. ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘পথের পাঁচালী’ গ্ৰন্থ ভাগলপুরে রচিত। শেষ-জীবনের অধিকাংশ সময় ঘাটশিলায় থাকতেন। মাত্র ২১ বছরের সাহিত্য-জীবনে তিনি বহু উপন্যাস, দিনলিপি, ছোটগল্প, ভ্ৰমণকাহিনী এবং শিশু-সাহিত্য রচনা করেন। তাঁর রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : ‘অপরাজিত’, ‘দৃষ্টিপ্ৰদীপ’, ‘আরণ্যক’, ‘ইছামতী’, ‘কিন্নরদল’, ‘দেবযান’, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘বিপিনের সংসার’, ‘যাত্রাবদল’ প্রভৃতি। ‘বনে পাহাড়ে’, ‘মরণের ডঙ্কা বাজে’, ‘হীরা মানিক জ্বলে’, ‘চাঁদের পাহাড়’–কিশোরদের জন্য রচিত। ‘উৎকর্ণ’ ‘স্মৃতির রেখা’ তাঁর ডায়েরী গ্ৰন্থ। গ্রাম-বাঙলার দুঃখ, দারিদ্র্য, স্বপ্ন, আশা তাঁর রচনায় পরিস্ফুট হয়েছে। শুধু পল্লী-প্রকৃতি নয়, আরণ্য প্রকৃতিও তাঁর উপন্যাসে অপরূপ সজীবতা লাভ করেছে। ‘আরণ্যক’ গ্রন্থে প্রকৃতির এক অপরিচিত রূপ লীলায়িত হয়েছে। তাঁর ‘পথের পাঁচালী’ গ্ৰন্থ ইংরেজী ও ফরাসী ভাষায় অনুদিত হয়েছে। মৃত্যুর পর ১৯৫১ খ্রী. ‘ইছামতী’ উপন্যাসের জন্য তাকে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ প্ৰদান করা হয়।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ২ (১৮৯৬ – ১৯৬৮) চুঁচুড়া-হুগলী। খগেন্দ্রনাথ। প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়ার সময় বৈপ্লবিক আন্দোলনের সংস্পর্শে এসে কলেজ ছেড়ে কৃষ্ণনগর চলে আসেন। সেখানে ‘মাস্টারমশাই’ নামে পরিচিত হন। মহাত্মা গান্ধী ও আবদুল গফুর খাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৩০ খ্রী. আইন অমান্য আন্দোলনে কারাদণ্ড ভোগ করেন। কৃষ্ণনগর অ্যাথলেটিক ক্লাবের বিশিষ্ট কর্মী ও ব্যায়ামবীর ছিলেন। ১৯৪২ খ্রী. আন্দোলনে যোগ দিয়ে আট মাস আটক থাকেন। পরবর্তী কালে গোপবন্ধু চৌধুরীর সহযোগিতায় উড়িষ্যার গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
Leave a Reply