বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (জুন ২৬, ১৮৩৮- এপ্রিল ৮, ১৮৯৪) উনিশ শতকের বাঙালি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। গদ্য উপন্যাসের বিকাশে তাঁর অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাঁকে সাধারনত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়।
জীবনী:
১৮৩৮ সালের ২৬শে জুন চব্বিশ পরগনার নৈহাটির কাঁটালপাড়ায় বঙ্কিম জন্মগ্রহন করেন। তাঁর বাবা যাদবচন্দ্র ছিলেন হুগলীর ডেপুটি কালেক্টার। বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন যাদবচন্দ্রের তৃতীয় পুত্র । প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্র যথাক্রমে শ্যামাচরন ও সঞ্জীবচন্দ্র। সঞ্জীবচন্দ্র লেখক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন । বঙ্কিমচন্দ্রের কনিষ্ঠভ্রাতা পূর্ণচন্দ্রের কাছ থেকে বঙ্কিম-জীবনের বহু অজ্ঞাত মূল্যবান তথ্য জানা সম্ভব হয় ।
জন্মের পর ছয় বছর পর্যন্ত বঙ্কিমচন্দ্র কাঁটালপাড়াতেই থাকেন । পাঁচ বছর বয়েসে এখানেই তাঁর হাতেখড়ি হয় কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে । শিশু বয়সেই বঙ্কিমচন্দ্রের অসাধারন মেধার পরিচয় পাওয়া যায় । ১৮৪৪ সালে ছয় বছর বয়সে বঙ্কিমচন্দ্র পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে এসে কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন । ১৮৪৯ সালে পুনরায় কাঁটালপাড়ায় ফিরে আসেন এবং ফেব্রুয়ারী মাসে নারায়নপুর গ্রামের এক পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকার সঙ্গে বিয়ে হয় । এই সময় বঙ্কিমচন্দ্রের বয়স ছিল এগার বছর । কাঁটালপাড়ায় থাকাকালীন বঙ্কিমচন্দ্র খ্যাতনামা পণ্ডিত শ্রীরাম ন্যায়বাগিশের কাছে সংস্কৃত শেখেন । কিছুকাল পরে ১৮৪৯ সালে হুগলি কলেজে ভর্তি হন । এখানে তিনি সাত বছর পড়েন । হুগলি কলেজে পড়াকালীন ১৮৫৩ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন । এই বছরেই সংবাদ প্রভাকরে কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে কুড়ি টাকা পুরষ্কার লাভ করেন । হুগলি কলেজে অধ্যয়নকালেই বঙ্কিমচন্দ্র কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জনে গদ্য-পদ্য রচনা আরম্ভ করেন । পরবর্তীকালে তাঁর বহু রচনা এই দুই কাগজে প্রকাশিত হয় । হুগলি কলেজে ১৮৫৬ সালে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সব বিষয়ে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে তিনি দুই বছরের জন্য কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন । এই বছরই তিনি হুগলি কলেজ ছেড়ে আইন পড়বার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন । ১৮৫৭ সালে জানুয়ারী মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় । এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রবর্তন করেন । প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন । পরের বছর ১৮৫৮ সালে প্রথমবারের মত বি.এ. পরীক্ষা নেওয়া হয় । মোট দশজন ছাত্র প্রথমবারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন । উত্তীর্ণ হয়েছিলেন কেবলমাত্র বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু।
তার বাবার মতো তিনিও সরকারী চাকরিতে যোগদান করেন, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টার পদে। সারা জীবন তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যান। স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে দুটি খেতাবে ভূষিত করে – ১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে কম্প্যানিয়ন অফ দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার খেতাব। তবে সরকারী কর্মকর্তা নয় বরং লেখক এবং হিন্দু পুনর্জাগরনের দার্শনিক হিসেবেই তিনি অধিক প্রখ্যাত।
উপন্যাস:
দুর্গেশনন্দিনী
কপালকুণ্ডলা
মৃণালিনী
বিষবৃক্ষ
ইন্দিরা
যুগলাঙ্গুরীয়
চন্দ্রশেখর
রাধারানী
রজনী
কৃষ্ণকান্তের উইল
রাজসিংহ
আনন্দমঠ
দেবী চৌধুরানী
সীতারাম
প্রবন্ধ গ্রন্থ:
কম্লাকান্তের দপ্তর
লোকরহস্য
কৃষ্ণ চরিত্র
Leave a Reply