প্যারীচাঁদ মিত্র (২২-৭-১৮১৪ – ২৩-১১-১৮৮৩) কলিকাতা। রামনারায়ণ। ডিরোজিও শিষ্যমণ্ডলীর একজন হিন্দু কলেজের ছাত্র এবং বাঙলার নবজাগরণের অন্যতম নেতা। ক্যালকাটা পাবলিক লাইব্রেরীর গ্রন্থাগারিকরূপে কৃতিত্ব দেখান। পরে ব্যবসায়-বাণিজ্যেও সাফল্য লাভ করেন। বাংলা, ফারসী ও ইংরেজী ভাষায় তাঁর সমান দক্ষতা এবং ইংরেজী ও বাংলা রচনায় বিপুল খ্যাতি ছিল। কলিকাতা-সমাজের প্রধানরূপে সকল জনহিতকর কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য, পশু-ক্লেশ নিবারণী সভার সভ্য, বেথুন সোসাইটি ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটির (পরে অ্যাসোসিয়েশন) অন্যতম উদ্যোক্তা ও সম্পাদক এবং জাস্টিস অফ দি পীস ছিলেন। ১৮৩৮ খ্রী. জ্ঞানান্বেষণ সভার সম্পাদক হন। ‘ইংলিশম্যান’, ‘ইন্ডিয়ান ফিল্ড’, ‘ক্যালকাটা রিভিউ’, ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, ‘ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া’ প্রভৃতি পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সমালোচনায় তাঁর রচিত ‘The zemindar and Ryots’ প্রবন্ধটি আলোড়ন সৃষ্টি করে। গরীব চাষীর রক্ষাকবচ হিসাবে তিনি পঞ্চায়েত ব্যবস্থার দাবি করেন। কৃষি-বিষয়ক আধুনিক জ্ঞান কৃষকদের মধ্যে প্রচারের জন্য অ্যাগ্রিকালচারাল সোসাইটির সদস্য পদে থাকা-কালে একটি অনুবাদ কমিটি স্থাপন করেন। এই কমিটি ভারতবর্ষীয় ‘কৃষি-বিষয়ক বিবিধ সংগ্ৰহ’ নামে পুস্তিকা প্রচার করে। পুলিসী অত্যাচারের বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিবাদ করেন ও অংশত সফলকাম হন। অন্য কৃতিত্ব রাধানাথ শিকদারের সহযোগিতায় মহিলাদের হিতকরী ‘মাসিক পত্রিকা’র সম্পাদনা। পত্রিকাটি ১৮৫৪ খ্রী. থেকে তিন বছর চলেছিল। এই পত্রিকায় ‘টেকচাঁদ ঠাকুর ছদ্মনামে প্রকাশিত তাঁর শেষ্ঠ উপন্যাস আলানের ঘরের দুলাল ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এটি একাধারে গল্প ও সমাজচিত্র এবং আধুনিক বাংলা উপন্যাসের অগ্রদূত। এই গ্রন্থে চলতি কথ্যভাষা প্রয়োগ করে বাংলা ভাষার নূতন সম্ভাব্যতা আবিষ্কার করেন। এই কথ্যভাষার নাম হয়েছিল ‘আলালী ভাষা’। গ্রন্থটি ইংরেজীতে অনুদিত হয়েছিল। অপর রচিত গ্ৰন্থ ‘মদ খাওয়া বড় দায়’, ‘যৎকিঞ্চিৎ’, ‘কৃষিপাঠ’ প্রভৃতি। পাস্ত্রী লঙ তাকে ‘ডিকেন্স অফ বেঙ্গল’ বলতেন।
পূর্ববর্তী:
« প্যারীচরণ সরকার
« প্যারীচরণ সরকার
পরবর্তী:
প্যারীমোহন দাস »
প্যারীমোহন দাস »
Leave a Reply