বাসুদেব দাশগুপ্ত (জন্ম ৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৩৮, মৃত্যু ২০০৫ ) বাংলা সাহিত্যে হাংরি আন্দোলন-এর একজন বিশিষ্ট গল্পকার ও ঔপন্যাসিক । তাঁর জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের মাদারিপুর শহরে ।
পারিবারিক পরিচয় ও শিক্ষা
দেশ ভাগের কারণে ১৯৪৭ সালে তাঁর পিতা ধীরেন্দ্রনাথ এবং মা সুরোবালা ছয়পুত্র ও এক কন্যাসহ উদ্বাস্তু পরিবাররূপে পশ্চিমবাংলায় আশ্রয় নেন । অন্যান্য উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তানদের ন্যায় বাসুদেব দাশগুপ্তও কম্যুনিষ্ট ছাত্র পরিষদে যোগ দেন । ১৯৬১ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে তিনি বাংলা ভাষায় সান্মানিক স্নাতক হন; ১৯৭০ সালে বি.এড পাশ করেন । ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি কল্যাণগড় বিদ্যামন্দিরে শিক্ষকতে করেন ও সেখান থেকে অবসর নেন । ১৯৭০ সালে তিনি বান্ধবী ইন্দিরা কুণ্ডুকে য়িবাহ করেন ।
হাংরি আন্দোলন
১৯৬২ সালে শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও দেবী রায়-এর আহ্বানে হাংরি আন্দোলন-এ যোগ দেন । মাদকে আসক্তি থাকলেও, হাংরি কার্যকলাপ অর্থে যে কাউনটার কালচারাল কর্মকাণ্ডে আন্দোলনকারীরা ব্যাপৃত ছিলেন, তাতে তিনি অংশগ্রহন করতেন না । অবশ্য ১৯৬৪ সালে তাঁর বিরুদ্ধেও গ্রেপতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল ।
সাহিত্যকর্ম
১৯৬৩ সালে রন্ধনশালা গল্প লিখে তিনি সাড়া ফেলে দেল । ১৯৬৪ সালে লেখেন রতনপুর এবং ১৯৬৫ সালে রিপুতাড়িত এই গল্পগুলির কারণে অন্যান্য হাংরি আন্দোলনকারীদের তুলনায় তিনি তখনই বিদ্যায়তনিক স্বীকৃতি পান । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (চতুরঙ্গ ১৩৭৭) উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উদয়শংকর ভর্মা (কবিতীর্থ ২০০৬) বাসুদেব দাশগুপ্তের গল্ল্পকে বলেছেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের ধারায় লেখা ম্যাজিক রিয়ালিস্ট রচনা । সবসুদ্ধ ১৩টি ছোটগল্প লিখেছেন বাসুদেব দাশগুপ্ত; উপন্যাস লিখেছেন তিনটি । ঔপন্যাসিক দেবেশ রায় বলেছেন (ক্ষুধার্ত ১৯৭২) বাসুদেব দাশগুপ্তের রচনায় ‘শারীরিক ঘটনাই যেন আমাদের মানবিক, মানসিক সম্পর্কগুলোর নিয়ন্তা’ ।
রচনাপঞ্জী
ছোটগল্প : চোরাবালি (১৯৫৯), রন্ধনশালা (১৯৬৩), বমনরহস্য (১৯৬৩), রতনপুর (১৯৬৪), রিপুতাড়িত (১৯৬৪), অভিরামের চলাফেরা (১৯৬৭), লেনি ব্রুশ ও গোপাল ভাঁড়কে (১৯৬৮), দেবতাদের কয়েক মিনিট (১৯৭১), আনন্দবাজার, গোয়েন্দা আর্তনাদ — রিপরিপ (১৯৭১), ডং ওয়াং এর গোপন সংকেত (১৯৭২), দূরবীন (১৯৮৩), শেষ প্রহরে অভিযান (১৯৮৭), মৌননগরীর ইতিকথা (১৯৯৬) ।
উপন্যাস: উৎপাত (১৯৬২), খেলাধুলা ( ১৯৮১), মৃত্যুগুহা থেকে প্রথম কিস্তি (১৯৮৭) ।
প্রবন্ধ/বক্তৃতা: বন্দী বাস্তবতা ও আমার অলিখিত গদ্যের ছিন্নরূপ (১৯৮৬), আলপনার জন্য; সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ‘এখন আমার কোনো অসুখ নেই’ উপন্যাসের আলোচনা (১৯৭৭), প্রসঙ্গ বিনয় মজুমদার (বাং ১৪০৫), নববর্ষের অনাবিল আনন্দ (১৯৭৮) ।
সাক্ষাৎকার: নিষাদ পত্রিকা (১৯৭০), দ্বন্দ্বমুখ পত্রিকা (১৯৭৮), তা পত্রিকা (১৯৯৯) ।
সূত্র: ৪
Leave a Reply