নলিনী দাস (১-১-১৯১০—১৯-৬-১৯৮২) উত্তর সাহবাজপুর—বরিশাল। দুৰ্গামোহন। স্বাধীনতা-সংগ্রামী। শিক্ষা-জীবন ভোলাতে শুরু। ৫ম শ্রেণীতে পড়ার সময় হরতাল ও ধর্মঘটে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। ১৯২৮ খ্ৰী ভোলা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে বরিশাল বি.এম. কলেজে আইএস-সি ক্লাশে ভর্তি হন। বরিশালে সে সময়ে তিনি একজন ভাল ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। পরীক্ষার আগেই কলিকাতা মেছুয়াবাজার বোমার মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী হলে তিনি আত্মগোপন করেন। পলাতক অবস্থায় ১৯৩০ খ্ৰী. কলিকাতার পুলিশ কমিশনার টেগার্ট সাহেবকে হত্যা-প্ৰচেষ্টা মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৩১ খ্ৰী. হিজলী ক্যাম্পে রাজবন্দীদের উপর পুলিসের গুলিবর্ষণকালে তিনি সেখানে ছিলেন। ঐ বছর ডিসেম্বর মাসে তিনি ও ফণী দাশগুপ্ত হিজলী জেল থেকে পলায়ন করেন। পলাতক অবস্থায় ১৯৩২ খ্ৰী. ফরাসী অধিকৃত চন্দননগরের যে বাড়ীতে তিনি ও বিপ্লবী দীনেশ মজুমদার ও বীরেন রায় থাকতেন তা পুলিস ঘেরাও করলে তারা ৪ ঘণ্টাব্যাপী লড়াই করেন। এই খণ্ডযুদ্ধে চন্দননগর পুলিস কমিশনার কিউ সাহেব নিহত, বীরেন রায় ধৃত এবং তিনি ও দীনেশ মজুমদার আহত অবস্থায় পালাতে সক্ষম হন। ১৯৩৩ খ্রী. কলিকাতার এক বাড়ীতে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে আহত অবস্থায় অন্যান্য বিপ্লবীদের সঙ্গে তিনি ধরা পড়ে জগদানন্দ মুখার্জি সহ যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ১৯৩৪ খ্রী. আন্দামানে প্রেরিত হন। এই মামলায় দীনেশ মজুমদারের ফাঁসি হয়। আন্দোলনের চাপে সরকার ১৯৩৮ খ্রী. আন্দামান থেকে তাদের কলিকাতায় ফিরিয়ে আনলেও ৩০ জন রাজবন্দী সহ তাকে ‘ভয়ানক বিপ্লবী ব্যক্তি’-রূপে চিহ্নিত করে সেপ্টেম্বর ১৯৪৬ খ্রী. পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখে। মুক্তি পেয়েই ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টির নিষ্ঠাবান কর্মী হিসাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-বিধবস্ত কলিকাতায় প্রতিরোধ কমিটির কাজে তৎপর হয়ে ওঠেন। দেশ বিভাগের পর বরিশালে চলে যান। তদানীন্তন পুর্ব-পাকিস্তান ভোলায় কৃষক আন্দোলনের কাজে সংশ্লিষ্ট থাকায় ১৯৫০ খ্ৰীঃ পাক সরকার কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৫৬ খ্রী. যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার আমলে ছাড়া পান। শুধু কৃষক আন্দোলনে নয়, পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য থেকে মুক্তি পাবার জন্য সেখানে যে গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী শক্তি সংগঠিত হচ্ছিল তারও তিনি সক্রিয় অগ্রণী কর্মী ছিলেন। ১৯৫৯ খ্ৰী. আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল ও সামরিক আইন জারীর পর তিনি আত্মগোপন করেন। তিনি জুলাই থেকে ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রি পলাতক অবস্থায় মুক্তি ফৌজের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগঠন করেছেন। এই সময় পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্বন্ধে তার বক্তব্য New Wave পত্রিকায় ‘Defient Barisa’ নামে প্ৰকাশিত হয়। তার রচিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে দ্বীপান্তরের বন্দী’ গ্রন্থে তার দীর্ঘ ২৩ বছরের কারাবাস ও ২০/২১ বছরের পলাতক জীবনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কিছু পরিচয় পাওয়া যায়।
পূর্ববর্তী:
« নলিনাক্ষ দত্ত
« নলিনাক্ষ দত্ত
পরবর্তী:
নলিনী মিত্র »
নলিনী মিত্র »
Leave a Reply