নরেশচন্দ্ৰ সেনগুপ্ত (১) (৩.৫.১৮৮৩ – ১৭.৯.১৯৬৪) বাঁশী-টাঙ্গাইল। মহেশচন্দ্ৰ। লব্ধপ্ৰতিষ্ঠ আইনজীবী, অধ্যাপক, ও প্ৰগতিশীল সাহিত্যিক। ১৯০৬ খ্রী. ওকালতি পাশ করে হাইকোর্টে যোগ দেন এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজে অধ্যাপনা করেন। প্ৰাচীন ভারতের ব্যবহার ও সমাজনীতি বিষয়ে গবেষণা করে ১৯১৪ খ্রী. ডি-এল. উপাধি প্ৰাপ্ত হন। ১৯১৭ খ্রী. ঢাকা আইন কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপ্যাল নিযুক্ত হন। ১৯২০–২৪ খ্রী. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ছিলেন। আইন-উপদেষ্টা হিসাবে তার খ্যাতি বিস্তৃতি লাভ করে। পুনরায় কলিকাতায় আইন ব্যবসায় শুরু করেন। ১৯৫০ খ্রী. কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঠাকুর আইন অধ্যাপক’ হন। ইউনেস্কোর আমন্ত্রণে ১৯৫১ খ্রী. আমেরিকায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে যোগ দেন। ১৯৫৬ খ্রী. ভারতীয় আইন কমিশনের সদস্য হন। আইন-সংক্রান্ত তথ্যপূর্ণ গ্ৰন্থ যেমন তিনি রচনা করেছেন তেমনই বহু প্ৰবন্ধ, গল্প, নাটক ও উপন্যাস রচনা করে সাহিত্যক্ষেত্রে বিশেষ স্থান অধিকার করেছেন। বাংলা সাহিত্যে জীবনধর্মী উপন্যাস রচনার অন্যতম পথিকৃৎ তাকে নিয়ে সাহিত্যের আসরে এক সময়ে শ্লীলতা-অশ্লীলতা, নীতি-দুর্নীতির বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। নারীর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে তথাকথিত বিশুদ্ধ সতীত্বের চেয়ে মর্যাদা দিয়েছেন বেশি। তার দীর্ঘ ওকালতি জীবনের বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা মানবমনের কুটিল গতিপ্রকৃতি উদঘাটনে বিশেষ সাহায্য করেছিল। ১৯১০ খ্রী তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ ‘Abbey of Bliss’ নামে ইংরেজীতে অনুবাদ করেন। রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬০ টি। ‘শুভা’, ‘পাপের ছাপ’ প্রভৃতি বই-এ তিনি সামাজিক সমস্যার উত্থাপন করেছেন। তার একাধিক উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। ইংরেজীতে তিনি ‘Evolution of Law’ নামে একটি প্রামাণিক গ্রন্থ রচনা করেন। কর্মজীবনে বিভিন্ন সময়ে রিপন কলেজ এবং সিটি কলেজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। প্রথম জীবনে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন এবং কংগ্রেস-কর্মী হিসাবে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯২৫ – ২৬ খ্ৰী. নবগঠিত ওয়ার্কাস এন্ড ‘পেজ্যান্টস পার্টি’র প্রেসিডেন্ট হন। পরে ১৯৩৪ খ্রী ’লেবার পার্টি অব ইন্ডিয়ার’ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার সময়ে এই দুই প্রতিষ্ঠানেরই ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন অতুলচন্দ্ৰ গুপ্ত। ২১৭৬-১৯৩৬ খ্রী. গোর্কির মৃত্যুতে কলিকাতায় অনুষ্ঠিত শোকসভায় নিখিল ভারত প্ৰগতি লেখক সঙ্ঘের যে সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়েছিল তিনি তারও সভাপতি ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে নূতন দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রগতিশীল চিন্তা বিস্তারের ক্ষেত্রে এই সঙ্ঘের অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত (২) (১৯১৬ – ২৩-১১-১৯৮৪) শিশু-কল্যাণ ও প্রতিবন্ধীদের স্বনির্ভর করার কাজে উল্লেখযোগ্য দানের জন্য ১৯৮২ খ্রী. তাকে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়। কৃতী মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ১৯৬৩ খ্রী. ঝাড়গ্রামের অনুন্নত ও আদিবাসী এলাকা গড়শালবনীতে প্রতিষ্ঠিত বিকাশভারতী ওয়েলফেয়ার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা-ডিরেক্টর ছিলেন।
Leave a Reply