ত্ৰৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় (২২.৭.১৮৪৭ – ৩.১১.১৯১৯) রাহুতা-চব্বিশ পরগনা। বিশ্বম্ভর। চুঁচুড়ার ডাফ সাহেবের স্কুলে ও তেলিনীপাড়া স্কুলে শিক্ষাপ্রাপ্ত হন। সংসারের অসচ্ছল অবস্থা দেখে ১৮৬৫ খ্রী নিরুদেশ হয়ে নানা দেশ ভ্ৰমণ করেন। সেই সময়ে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকতার পর কটক জেলায় পুলিসের সাব-ইনস্পেক্টর হন (১৮৬৮) এবং ওড়িয়া ভাষা শিখে ‘উৎকল শুভকরী’ নামে মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এই সময় স্যার উইলিয়াম হান্টার তাকে ১৮৭০ খ্রী. ‘বেঙ্গল গেজেটিয়ার’ সঙ্কলন অফিসে কেরানীর পদ দেন। এরপর উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের কৃষি ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান কেরানী এবং পরে বিভাগীয় ডাইরেক্টরের একান্ত সহকারী হন। ১৮৮১ খ্রী. ভারত সরকারের রাজস্ব বিভাগে বদলী হন। ১৮৮৬ খ্রী. ঐ বিভাগ ত্যাগ করে কলিকাতা মিউজিয়ামের সহকারী কিউরেটর হন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে যেসব শিল্পদ্রব্য নির্মিত হয় তাঁর কয়েকটি বিবৃতিমূলক তালিকাপুস্তক ইংরেজীতে প্ৰকাশ করেন। বর্ধমানে অবস্থানকালে ফারসী ভাষা শেখেন। দেশে দুর্ভিক্ষের সময় প্ৰাণ বাঁচানোর পস্থা হিসাবে গাজর চাষের উপকারিতা বুঝে সরকারকে এ বিষয়ে অবহিত করেন (১৮৭৮)। দু’বছর পরে রায়বেরিলী ও সুলতানপুর জেলার দির্ভিক্ষের সময় তাঁর প্ৰস্তাবিত গাজর চাষের জন্য অনেকের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়। ১৮৮৩ খ্রী. কলিকাতা আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে কয়েকটি বিষয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৮৮৬ খ্ৰী. তাকে লণ্ডনে অনুষ্ঠিত ঔপনিবেশিক প্রদর্শনীতে পাঠানো হয়। ইউরোপের নানা স্থানে ভ্ৰমণ করে ‘A Visit to Europe’ গ্ৰন্থ এবং মিউজিয়ামে চাকরি করা কালে সরকারের অনুরধে ‘Art Manufactures of India’ গ্রন্থ রচনা করেন। কিন্তু বাঙলাদেশে সাহিত্যিকরূপেই তার প্রধান পরিচয়। তিনি বাংলা সাহিত্যে অজ্ঞাতপূর্ব এক উদ্ভট হাস্যরসের প্রবর্তক। রচিত বাংলা গ্ৰন্থ : ‘কঙ্কাবতী’, ‘ভূত ও মানুষ’, ‘ফোকলা দিগম্বর’, ‘মুক্তামালা’, ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞানসভা’, ‘ময়না কোথায়’, ‘মজার গল্প’, ‘পাপের পরিণাম’ ও ‘ডমরু চরিত’। তা ছাড়া ‘A Descriptive Catalogue of Products’, ‘A Hand Book Of Indian Products’, ‘A List of Indian ECOnomic Products’ প্ৰভৃতি এবং ‘বিজ্ঞান বোধ’ ও আরও কয়েকটি বিদ্যালয়পাঠ্য গ্রন্থেরও তিনি প্রণেতা। তার রচিত ‘ডমরু চরিত’ অপূর্ব সৃষ্টি। সাপ্তাহিক ‘বঙ্গবাসী’, ‘জন্মভূমি’ প্রভৃতি পত্রিকারও লেখক ছিলেন। ‘বিশ্বকোষ’ অভিধান রচনায় ভ্ৰাতা রঙ্গলালকে সাহায্য করেন। ‘wealth of India’ মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা-কার্যেও তার সাহায্য ছিল।
পূর্ববর্তী:
« ত্ৰৈলোক্যনাথ মিত্ৰ
« ত্ৰৈলোক্যনাথ মিত্ৰ
পরবর্তী:
থাকমণি »
থাকমণি »
Leave a Reply