তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (২৩.৭.১৮৯৮ – ১৪.৯.১৯৭১) লাভপুর–বীরভূম। হরিদাস। প্রখ্যাত সাহিত্যিক। কলিকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে আই.এ. পাঠ্যকালে ১৯২১ খ্রী. অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের জন্য অন্তরীণ হন। পুনরায় ১৯৩০ খ্রী এক বছর কারাবরণ করেন।
১৯৩১ খ্রী জেল থেকে বেরিয়ে সাহিত্যের পথে দেশসেবার সঙ্কল্প গ্ৰহণ করেন। কর্মজীবনে প্ৰথমে কিছুদিন কলিকাতায় কয়লার ব্যবসায় এবং পরে কিছুদিন কানপুরে চাকরি করেন। ১৩৩৩ ব ‘ত্ৰিপত্ৰ’ কবিতা সঙ্কলন প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্য সাধনা শুরু। আমৃত্যু সাহিত্য-সাধনায় রত থেকে আধুনিক কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বলে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যে বীরভূমের লালমাটি আর তার মানুষকে হাজির করেছেন নিপুণতায়। জমিদার বাড়ির সন্তান বলে সামন্ততন্ত্রের বা জমিদারতন্ত্রের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যে প্ৰচণ্ড বিরোধিতা, তা দেখেছেন। এই দেখার ফলশ্রুতি ‘কালিন্দী’ ও ‘জলসাঘর’। বেদে, পটুয়া, মালাকার, লাঠিয়াল, চৌকিদার, ডাকহরকরা প্রভৃতি গ্ৰাম্যচরিত্র তার সাহিত্য-সম্ভারের প্রধান অংশ জুড়ে আছে। পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, দেশবিভাগ, অর্থনৈতিক বৈষম্যের নির্লজ্জ বিস্তার, যুব সম্প্রদায়ের ক্ৰোধ, অস্থিরতা, বিদ্রোহ-এ সব বিষয়ও তার রচনায় স্থান পেয়েছে। তার বহু গল্প ও উপন্যাস নাটক এবং চলচ্চিত্ররূপে সাফল্যলাভ করেছে। ‘দুইপুরুষ’, ‘কালিন্দী’ ও ‘আরোগ্য নিকেতন’ এ দিক থেকে উল্লেখযোগ্য। সঠিক ছন্দোবদ্ধ পঙক্তির আদর্শবাদী কবিতাও মাঝে মাঝে রচনা করেছেন। কাব্যরস ও ভাষা ব্যবহারে ‘কবি’ উপন্যাসের গানগুলি স্মরণীয়। তার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য উপন্যাস : ‘গণদেবতা’, ‘পঞ্চগ্ৰাম’, ‘ধাত্রীদেবতা’, ‘মন্বন্তর’, ‘হাঁসুলীবাঁকের উপকথা’ প্রভৃতি; ছোট গল্প : ‘রসকলি’, ‘বেদেনী’, ‘ডাকহরকরা’ প্রভৃতি। শেষ বয়সে কিছু চিত্রও অঙ্কন করেছিলেন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎ স্মৃতি পুরস্কার ও জগত্তারিণী স্মৃতিপদক, রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাডেমী পুরস্কার, পদ্মশ্ৰী ও পরে পদ্মভূষণ উপাধি এবং জ্ঞানপীঠ সাহিত্য পুরস্কারও প্রাপ্ত হন।
১৯৫২ খ্রী. বিধান পরিষদের সদস্য হন। ১৯৫৫ খ্রী ভারতীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে চীন সফরে যান। ১৯৫৭ খ্রী. তাসখন্দে এশীয় লেখকদের সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব করেন ও মস্কো সফর করেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন। (১৯৭০)।
Leave a Reply