বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়, বনফুল (১৯-৭-১৮৯৯ – ৯-২-১৯৭৯) মণিহারী-পূর্ণিয়া, বিহার। প্রখ্যাত সাহিত্যিক। সাহেবগঞ্জ হাই স্কুলে পড়ার সময় ১৯১৫ খ্ৰী. তাঁর প্রথম কবিতা ‘মালঞ্চ’ পত্রিকায় প্ৰকাশিত হয়। এর পর ‘প্রবাসী’ ও ‘ভারতী’তে তাঁর কবিতা ছাপা হয় ‘বনফুল’ ছদ্মনামে। ১৯১৮ খ্রী. ম্যাট্রিক ও হাজারীবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজ থেকে আইএস-সি, পাশ করে ডাক্তারী পড়তে আসেন কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজে। পরে পাটনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯২৭ খ্রী. ডাক্তারী পাশ করে ভাগলপুরে প্যাথলজিস্ট হিসাবে ৪০ বছর কাজ করেন। ১৯৬৮ খ্রী. থেকে কলিকাতার বাসিন্দা হন।
ছাত্রজীবনে তাঁর কবিতা ও ছোটগল্প তখনকার বিভিন্ন নামকরা কাগজে প্ৰকাশিত হয়। প্ৰথম উপন্যাস ‘তৃণখণ্ড’ ডাক্তারী জীবনের গোড়ার দিকে লেখা। কলেজ-জীবনে সহপাঠী পেয়েছিলেন কবি অমিয় চক্রবর্তী এবং ঔপন্যাসিক সরোজকুমার রায়চৌধুরীকে। সেই সময়কার সাহিত্য-সাধনায় প্রধান প্রেরণাদাতা ছিলেন সাহেবগঞ্জের বটুকদা (সুধাংশুশেখর মজুমদার)। পরে কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজে এসে পেয়েছিলেন মাস্টারমশাই হিসাবে ব্যঙ্গরচনার গুরু ডাঃ বনবিহারী মুখোপাধ্যায়কে। তাঁরই জীবনকে ভিত্তি করে তাঁর উত্তরকালের উপন্যাস ‘অগ্নীশ্বর’ রচিত হয়েছিল। পরিমল গোস্বামীর কাছ থেকেও প্রেরণা পেয়েছেন। সাহিত্যে তাঁর জীবিকা এবং প্রবাস-জীবন যুক্তভাবে অনেকখানি কাজ করেছে। মজলিসী আডিডায় ও ভোজন-রসিকতায় তাঁর নাম ছিল। পক্ষিজগৎ নিয়ে তিন খণ্ডে সম্পূৰ্ণ ‘ডানা’ উপন্যাসে তাঁর অগাধ অধ্যয়ন এবং পর্যবেক্ষণ-ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়। বাংলা সাহিত্যে ক্ষুদ্রতম ছোটগল্পেরও জনক তিনি। ছোটগল্প, নাটক, উপন্যাস, কাব্য-সকল রচনাতেই সমান দক্ষ ছিলেন। প্ৰায় শতাধিক গ্রন্থের লেখক।
উল্লেখযোগ্য অন্যান্য রচনা : ‘স্থাবর’, ‘জঙ্গম’, ‘মন্ত্ৰমুগ্ধ’, ‘হাটেবাজারে’, ‘কিছুক্ষণ’, ‘বিন্দুবিসর্গ’, ‘দ্বৈরথ’, ‘ভীমপলশ্রী’, ‘শ্রীমধুসূদন’, ‘বিদ্যাসাগর’, প্রভৃতি। ‘পশ্চাৎপট’ তাঁর আত্মজীবনী-মূলক গ্ৰন্থ। রবীন্দ্র পুরস্কার, জগত্তারিণী পদক, ভাগলপুর ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট উপাধি লাভ করেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন।
Leave a Reply