শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় (১৮/২১-৩-১৯০১ — ২-১-১৯৭৬) রূপসীপুর-বীরভূম। ধরণীধর। খ্যাতনামা সাহিত্যিক। ‘কালিকলম’ যুগের অন্যতম স্রষ্টা। তিন বছর বয়সে মায়ের মৃত্যুর পর বর্ধমানে মামাবাড়িতে জাদরেল দাদামশাই রায়সাহেব মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বড় হয়েছেন। দাদামশাই ছিলেন ধনী কয়লা-ব্যবসায়ী। বর্ধমানে স্কুল জীবনে নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তখন শৈলজানন্দ লিখতেন পদ্য। আর নজরুল লিখতেন গদ্য। প্রি-টেস্টের পরীক্ষার সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতেই তারা উভয়ে পালিয়ে যুদ্ধের। কাজে যোগ দিতে যান। কিন্তু ডাক্তারী পরীক্ষায় তিনি বাতিল গণ্য হন–নজরুল যুদ্ধে যোগ দেন। ফিরে এসে কলেজে ভর্তি হয়েও নানা কারণে পড়া শেষ না করে শর্টহ্যান্ড টাইপরাইটং শিখে তিনি কয়লা-কুঠিতে চাকরি নেন। পরে সে কাজ ছেড়ে সাহিত্য-কর্মে নিয়োজিত হন। ‘বাঁশরী’ পত্রিকায় তাঁর রচিত ‘আত্মঘাতীর ডায়েরী’ প্ৰকাশিত হলে ধনী দাদামশাই তাকে তাঁর আশ্রয় থেকে বিদায় দেন। সেখান থেকে তিনি কলিকাতায় আসেন। এখানে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্ৰ মিত্র, মুরলীধর বসু, প্ৰবোধকুমার সান্যাল, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, দীনেশরঞ্জন দাশ প্রভৃতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে এবং ‘কালিকলম’ ও ‘কল্লোল’ গোষ্ঠীর লেখকশ্রেণীভুক্ত হন। খনি-শ্রমিকদের নিয়ে বাংলা সাহিত্যে সার্থক গল্প-রচনায় শৈলজানন্দই পথিকৃৎ। উপন্যাস ও গল্পসহ প্ৰায় ১৫০ খানি গ্ৰন্থ তিনি রচনা করেছেন। ‘কয়লাকুঠির দেশে’, ‘ডাক্তার’, ‘বন্দী’, ‘আজ শুভদিন’, ‘আমি বড় হব’, ‘কনেচন্দন’, ‘এক মন দুই দেহ’, ‘ক্রৌঞ্চমিথুন’, ‘ঝড়ো হাওয়া’, ‘রূপং দেহি’, ‘সারারাত’, ‘অপরূপা’, ‘স্বনির্বাচিত গল্প’ (স্মৃতিচারণ), ‘যে কথা বলা হয়নি’ (চলচ্চিত্র সম্পর্কে স্মৃতিকথা) প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থ। তাঁর অনেক উপন্যাস ছায়াছবিতেও রূপায়িত হয়েছে। নিজেও ছবি পরিচালনা করেছেন। তাঁর প্রথম ছবি ‘পাতালপুরী’ (১৯৩৫)। স্বরচিত গল্পকাহিনী ‘নন্দিনী’, ‘শহর থেকে দূরে’, ‘মানে না মানা’, ‘বন্দী’, ‘অভিনয় নয়’ ও ‘রং বেরং’-এর চিত্র-পরিচালনা নিজেই করেছিলেন।
পূর্ববর্তী:
« শৈলকুমার মুখার্জি
« শৈলকুমার মুখার্জি
পরবর্তী:
শৈলবালা ঘোষজায়া »
শৈলবালা ঘোষজায়া »
Leave a Reply