জহির রায়হান (৫.৮.১৯৩৩ – জানুয়ারী ১৯৭২?) মজুপুর-নোয়াখালি। মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র-প্রযোজক। রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম। প্রকৃত নাম মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। জহির রায়হান তার সাহিত্যিক নাম। ১৯৪৭ খ্রী. দেশ-বিভাগের পর কলিকাতা থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। ১৯৫০ খ্রী. ম্যাট্রিক, ১৯৫৩ খ্রী. আইএস-সি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স নিয়ে বি-এ পাশ করেন। ১৯৫১-১৯৫৭ খ্রী. বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫২ খ্রী রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় কিছুদিনের জন্য কারারুদ্ধ হন। ১৯৫৬ খ্রী. চলচ্চিত্রের সংস্পর্শে আসেন এবং পরিচালকের সহকারিরূপে যথাক্রমে ‘যে-নদী মরুপথে’ ও ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছবিতে কাজ করেন। ১৯৫৬ খ্রী. ‘ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি নিজে ছবি করার সুযোগ লাভ করেন। তার নিজের পরিচালিত প্ৰথম ছবি ‘কখনো আসেনি’ ১৯৬১ খ্রী. মুক্তিলাভ করে। বাংলা, উর্দু ও ইংরেজী ছবি পরিচালনা করেছেন। কয়েকটি ছবির প্রযোজকও ছিলেন।
১৯৭১ খ্রী. তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধ-কালে একটানা নয় মাস ধরে পাক-ফৌজের তাণ্ডবে শেষ পর্যন্ত গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী নিধন চলতে থাকে। তিনি তখন বাংলা দেশের নবগঠিত অস্থায়ী সরকারের কেন্দ্ৰ মুজিবনগরে চলে আসেন এবং ‘Stop Genocide’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র তৈরি করেন। তারপর বাবুল চৌধুরীর ‘innocent Million’ ও আলমগীর কবীরের ‘Liberation Fighters’ চিত্রমুক্তি তারই তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের প্রথম ইংরেজী ছবির নির্মাতা তিনি। তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে তিনি ‘সঙ্গম’ নামে প্রথম রঙ্গীন ছবি তৈরী করেছিলেন। প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি-সৃষ্টিতেও তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তার অন্যান্য বিখ্যাত ছবি; ‘জীবন থেকে নেওয়া’, ‘বেহুলা’, ‘সোনার কাজল’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘আনোয়ারা’, ‘বাহানা’, ‘জ্বলতে সুরজ কে নীচে’, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ (অসমাপ্ত) ইত্যাদি। প্ৰায় ছবিরই তিনি নিজে কাহিনীকার ও ফটোগ্রাফার ছিলেন। তার ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবিটি একাধিক পুরস্কার লাভ করে। সাহিত্যিক হিসাবেও সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। রচিত ও প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ: ‘সূৰ্যগ্রহণ’; উপন্যাস : ‘শেষ বিকালের মেঘ’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘বরফ-গলা নদী’, ‘আর কতদিন’ প্রভৃতি। তাকে ১৯৬৪ খ্রী. আদমজী সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৭২ খ্রী. বাংলা একাডেমীর ‘একুশে ফেব্রুয়ারি সাহিত্য পুরস্কার’ (মরণোত্তর) দেওয়া হয়। পূর্ববঙ্গ স্বাধীন হবার পর তিনি মুজিবনগর থেকে ঢাকা ফিরে এসে জানলেন-তাঁর অগ্রজ শহীদুল্লাহ কায়সার ও আরও অনেক বুদ্ধিজীবী পাক-ফৌজের অনুচর আল-বদর বাহিনীর হাতে শহীদ বা নিখোঁজ হয়েছেন। নিখোঁজ বুদ্ধিজীবিদের সন্ধানে ‘বুদ্ধিজীবি হত্যা তদন্ত কমিটি’ গঠন করে তিনি নিজেই তদন্তের কাজে ৩০ জানুয়ারী ১৯৭২ খ্রী. ঢাকায় মীরপুরে গিয়ে আর ফিরে আসেন নি।
Leave a Reply