রাধারমণ দত্ত ১২৪০ বঙ্গাব্দে (১৮৩৩ ইং) সুনামগঞ্জ মহকুমার জগন্নাথপুর থানার অধীন আতুয়াজান পরগনার কেশবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন কেরন। তাঁর পিতা রাধামাধব দত্ত, বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন। উভয় ভাষাতেই তিনি গ্রন্থ রচনা করেন। মহাকবি জয়েদব এর ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের স-ছন্দ টীকা, ভারত সাবিত্রী ও ভ্রমর গীতা তিনি সংস্কৃতে রচনা কেরন। এছারা তিনি বাংলায় রচনা করেন কৃষ্ণলীলা কাব্য, পদ্মপুরাণ, সূর্যব্যত পাচালী ও গোবিন্দ ভোগের গান। রাধারমণের মায়ের নাম ছিল সুবর্না দেবী।
রাধারমণ দত্ত ১২৫০ বঙ্গাব্দে কৈশোরেই পিতৃহারা হন। মৌলভীবাজারের নিকটবর্তী আদপাশা গ্রামে শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম পার্ষদ সেন শিবানন্দের বংশীয় নন্দকুমার সেন অধিকারীর তনয়া গুবময়ী দেবীকে তিনি ১২৭৫ বঙ্গাব্দে বিয়ে করেন। রাধারমণ চার পুত্র সন্তানের – রাস বিহরী, নদীয়া বিহরী, বিপিন বিহরী ও রসিক বিহরী এর জনক। তিনি বাল্যাবধি ঈশ্বরে বিশ্বাসী ও ধর্মানুরাগী ছিলেন। শাস্ত্রীয় পুস্তকাদীর চর্চা ও সাধু সন্ন্যাসীর সংস্পর্শে এসে তিনি শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব ইত্যদি নানা মত ও পথের সঙ্গে পিরিচিত হেয়েছিলেন। কিন্তু কিছুতেই তার সন্তোষ বিধান হয় নি।
অবশেষে ৫০ বছর বয়সে মৌলভীবাজারের নিকটবর্তী ঢেউপাশা গ্রামের সাধক রঘুনাথ গোস্বামীর সাধনার কথা জ্ঞাত হয়ে তিনি তার কাছে যান। রঘুনাথের সান্নিধ্যে রাধারমণের তৃষিত হৃদয় শীতল হয়। তিনি তার কাছে দীক্ষা গ্রহণ করে সহছিয়া পদ্ধতিতে সাধনায় প্রবৃত্ত হন।
তিন পুত্র ও স্ত্রী গুণময়ী দেবীর অকাল প্রয়াণে তাঁর মনে প্রবল বৌরাগ্য দেখা দেয়। কৃষ্ণ প্রেমে বিভোর রাধারমণ বিষয় বাসনা ত্যাগ করে বাড়ির অদূরে নলুয়ার হাওরের পাশে একটি আশ্রম প্রতিষ্টা করে সেখানে দিবা রাত্র সাধনা ও ইষ্ট নামে মগ্ন এবং অসংখ্য ভক্ত পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতেন। ধ্যান মগ্ন অবস্হায় তিনি গান রচনা করে গেয়ে যেতেন। ভক্তরা শুনে শুনে তা স্মৃতিতে ধরে রাখত, লিখে নিত।
১৩২২ বঙ্গাব্দে ২৬ কার্তিক শুক্রবার রাধারমন দত্ত ইহধাম ত্যাগ করেন। কেশব পুরে নিজ বাটিতে তার সমাধিতে এখনো প্রতি সন্ধায় প্রদীপ জ্বালিয়ে কির্তন করে তাঁর ভক্তবৃন্দ তাঁকে স্বরন করে।
Leave a Reply