রণদাপ্রসাদ সাহা Ranada Prasad saha (নভেম্বর ১৬, ১৮৯৬ – মে ৭, ১৯৭১) বাংলাদেশের বিখ্যাত সমাজসেবক এবং দানবীর ছিলেন। আর. পি. সাহা নামে তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে হাসপাতাল, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গরীবদের কল্যানার্থে ট্রাস্ট গঠন করেন। ১৯৭১ সালে পাক-সেনাবাহিনী কর্তৃক নিহত হন।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
রণদাপ্রসাদ সাহা ১৮৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর ঢাকা জেলার সাভারের উপকন্ঠে কাছুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম দেবেন্দ্রনাথ সাহা এবং মাতার নাম কুমুদিনী। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল মীর্জাপুরে। চতুর্থ শ্রেনী পর্যন্ত তিনি মীর্জাপুর বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। তার পিতা অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। তার বয়স যখন সাত বছর তখন তার মাতা সন্তান প্রসবকালে ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তার পিতা দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহন করেন। বিমাতার আশ্রয়ে দুঃখ কষ্ট ও অভাব-অনটনের মধ্যে শৈশব অতিবাহিত করেন। চৌদ্দ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে যান। সেখানে গিয়ে জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে মুটের কাজ সহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হন। এরই মধ্যে স্বদেশী আন্দোলন-এ যোগদান করে কয়েকবার কারাবরণ করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) সময় বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোরে যোগ দিয়ে মেসোপটমিয়ায় (বর্তমান ইরাক) যান। সেখানে তিনি হাসপাতালে এক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় রোগীদের জীবন বাঁচালে তাকে নবপ্রতিষ্ঠিত (১৯১৬) বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এ কমিশন প্রদান করা হয়। যুদ্ধ শেষ হলে ১৯১৯ সালে পঞ্চম জর্জের সাথে সাক্ষাতের আমন্ত্রণে ইংল্যান্ড সফর করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে সেনাবাহিনী ত্যাগ করে রেলওয়ে বিভাগে টিকেট কালেক্টরের চাকরি নেন। পরবর্তীতে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কয়লার ব্যবসা শুরু করেন। চার বছরে ব্যবাসায়িক সাফল্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এ সময়ে দ্য বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানি (The Bengal River Service Company) নামে নৌ-পরিবহন সংস্থা এবং নৌ-পরিবহন বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪২ – ১৯৪৩ সালে সরকারের খাদ্যশস্য ক্রয়ের এজেন্ট নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ সালে| নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন এবং জর্জ এন্ডারসনের কাছ থেকে ‘জুট প্রেসিং বিজনেস’ এবং ‘গোডাউন ফর জুট স্টোরিং’ ক্রয় করে নেন। এরপরে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় ইংরেজদের মালিকানাধীন তিনটি পাওয়ার হাউস ক্রয় করেন। চামড়ার ব্যাবসাও শুরু করেন এই সময়। এভাবেই নিজ মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ধনকুবেরে পরিণত হন। পাশাপাশি দেশের কল্যানমূলক কাজে অর্থ দান করতে থাকেন। ১৯৭১ সালের ৭ মে পাকিস্তানি বাহিনী তাকে সপুত্রক হত্যা করে।
অবদান
রণদাপ্রসাদ সাহা ১৯৩৮ সালে মির্জাপুরে ২০ শয্যাবিশিষ্ট ‘কুমুদিনী ডিস্পেনসারি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৪ সালে সেটিই কুমুদিনী হাসপাতাল নামে পূর্ণতা লাভ করে। ১৯৪২ সালে তাঁর প্রপিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামে ‘ভারতেশ্বরী বিদ্যাপীঠ’ স্থাপন করে ঐ অঞ্চলে নারীশিক্ষার সুযোগ করে দেন যা ১৯৪৫ সালে ভারতেশ্বরী হোম্স্-এ রূপলাভ করে। ১৯৪৩-এ টাঙ্গাইলে কুমুদিনী কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পিতার নামে মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজ স্থাপন করেন। ১৯৪৭ সালে রণদাপ্রসাদ তার সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ গরীবদের উদ্দেশ্যে ব্যয় করার জন্য কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল নামে অলাভজনক প্রাইভেট কোম্পানী রেজিস্টার্ড করেন। মীর্জাপুরে ডিগ্রী মহিলা কলেজ কুমুদিনী মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময় রেডক্রস সোসাইটিকে এককালীন তিন লক্ষ টাকা দান করেন এবং ক্ষুদার্তদের জন্য চার মাসব্যাপী সারা দেশে দুইশ পঞ্চাশটি লঙ্গরখানা খোলা রাখেন। এছাড়াও তিনি টাঙ্গাইলে এস. কে. হাইস্কুল-এর ভবন নির্মাণ এবং ঢাকার কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটাল (সিএমএইচ)-এর প্রসূতি বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
[উত্সঃ ১, ৪, ৭]
Leave a Reply