কাজী জাফর আহমেদ (Kazi Zafar Ahmed) বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এরশাদ সরকারের সময়ে আগস্ট ১২, ১৯৮৯ থেকে ডিসেম্বর ৬, ১৯৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপ তথা ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি টঙ্গী অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা ছিলেন। সেসময় বিভিন্ন আন্দোলনে শ্রমিকদের সংগঠিত করার ব্যাপারে তার ব্যাপক ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভাসানী ন্যাপের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একজন ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে এককালের তুখোড় মাওপন্থী এই ছাত্রনেতার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তবুও রাজাকার শাহ আজিজের মতো তিনিও ঢুকে গেলে জিয়াউর রহমানের মন্ত্রীসভায়। সামরিক শাসকের রাজনৈতিক বৈধতা দেয়ার খাতিরে তল্পিবাহক রাজনৈতিক দল পিপলস ডেমোক্রাটিক পার্টি বানালেন কাজী জাফর৷ কার্যসিদ্ধির পর জিয়া দিলেন দল ভেঙে, জন্ম হলো ইউনাইটেড ফ্রন্ট৷ একসময় জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে ছিটকে পড়লেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের এই কীর্তিমান। তিনি কুমিল্লা -১২ (চৌদ্দগ্রাম) নির্বাচনী এলাকা থেকে বেশ কয়েকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
নারী আর অর্থ লোভী এরশাদের মন পাওয়ার সূত্র তার জানাই ছিল, এরশাদ তাকে বানালেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে বন্যা হলো৷ অসহায় মানুষদের জন্য বিদেশ থেকে আসা কোটি কোটি টাকার চিনি চুরি করে বাজারে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠল তার বিরুদ্ধে৷ চিনির কৃত্রিম সংকট তৈরির পর দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিল সিন্ডিকেট। বিক্ষুব্ধ মানুষ তখন দোকানে গিয়ে বলত, ‘এক পোয়া জাফর হবে ভাই!’ সেই থেকে চিনি জাফর একজন লুটেরা মুনাফাখোরেরি প্রতিকৃতি। ক্যান্সার হাসপাতালের নামে জমি দান করার ভাওতা করে তিনি হাতিইয়ে নিলেন বৈদেশিক সাহায্যের টাকা৷ কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির অর্থ আত্মসাতের দায়ে ১৯৯৯ সালে ১৫ বছরেযেজেল হয়েছিল তার৷ ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়া পেয়ে সেই চিনি জাফর আবার এরশাদের জাতীয় পার্টির বড় নেতা।
অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকায় তাকে নিয়ে লেখা হয়েছিল, ‘নিজ দেশের বন্যাপীড়িত মানুষের রিলিফের খাদ্য চুরি করে বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে শরণার্থীর সুবিধা দিয়েছে সরকার’। শরণার্থী হয়ে তিনি পাক্ষিক ৩৭০ ডলার এবং তার স্ত্রী ৩৪০ ডলার করে প্রতিবন্ধী ভাতাও পেয়েছেন নিয়মিত। অস্ট্রেলিয়ায় অতিভাষণ দুর্লভ হলেও সেখানে কাজী জাফর আহমেদ কীভাবে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিলেন সে রহস্যের কূল-কিনারা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড।
[উত্সঃ ৪, ৬, দৈনিক প্রথম আলো]
Leave a Reply