বেলায়েত হোসেন (Belayet Hossain) (১৯২৪–)
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ছোট ট্যাঙ্গড়া গ্রামে ১৯২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন বেলায়েত হোসেন৷ পিতা আলহাজ আঃ গফুর মুনশি ও মাতা ময়মুন নেছা৷ স্থানীয় সমাজ, সংস্কৃতি আর মানবতার কল্যাণ ভাবনায় কাটে এ নিবেদিতপ্রাণ মানুষটির সময়৷
১৯৩৮ সালে পাথরঘাটার হাতেমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৪৬ সালে ম্যাট্টিকুলেশন এবং ১৯৪৮ সালে আইএ পাস করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন৷ ৮২ বছরের এ প্রবীণ ১৯৬১ সালে চাকরি নেন মহকুমা গণসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে৷ এ পদে বরিশালে ৬ বছর এবং পিরোজপুরে কাটান ৯ বছর৷ বরিশালে চাকরি করাকালে তিনি উপলব্ধি করেন, নিজেকে গ্রাজুয়েট হতে হবে৷ অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে প্রতিষ্ঠিত হলো বরিশাল নাইট কলেজ৷ আজকের বিখ্যাত বরিশাল কলেজই সেই নাইট কলেজের পরবর্তী ফসল৷ নিজেদের প্রতিষ্ঠিত নাইট কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন মোঃ বেলায়েত হোসেন৷ নাইট কলেজ প্রতিষ্ঠার পর একইভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় বরিশাল ল-কলেজ৷ এ ক্ষেত্রেও বেলায়েত হোসেনের অবদান ছিল ব্যাপক৷ বরিশাল ল-কলেজ থেকে বেলায়েত হোসেন এলএলবি ডিগ্রি নেন ১৯৭৪ সালে৷ ১৯৭৭ সালে তিনি মহকুমা গণসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে প্রথমবারের মতো নিজ জেলা বরগুনায় আসেন৷ ১৯৮৪ সালে বরগুনা জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পেলে তিনি জেলা তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পান৷ ১৯৮৬ সালে তিনি বরগুনা থেকেই অবসর নেন৷ ১০ বছর বরগুনায় চাকরি করার সময় বেলায়েত হোসেন নবগঠিত বরগুনা জেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন নিঃস্বার্থভাবে৷
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বেলায়েত হোসেন সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন স্বাধীনতার পরে মিলিশিয়া ক্যাম্পের বানারীপাড়া থানার ইনচার্জ থাকাকালীন সেখানকার ২২৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীর স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট তিনি নিজ হাতে বিতরণ করেন৷
ছেলেবেলা থেকেই লেখালেখিতে আসক্ত বেলায়েত হোসেন৷ বরগুনা প্রেস ক্লাবের একজন অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি৷ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তিনি বরিশাল থেকে প্রকাশিত বরিশাল দর্পণ পিরোজপুর থেকে প্রকাশিত পিরোজপুর দর্পণ এবং বরগুনা থেকে প্রকাশিত বরগুনা কণ্ঠ নামে তিনটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন৷ দীর্ঘদিন তিনি নিউনেশন পত্রিকার বরগুনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন৷ বিভিন্ন সময়ে এ প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব অলঙ্কৃত করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ৷ এর মধ্যে অফিসার্স ক্লাব, পাবলিক লাইব্রেরি, টাউনহল কমিটি, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট, বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, উপজেলা শিক্ষা কমিটি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন কমিটি, জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটি, জেলা ভিজিটর কমিটি অন্যতম৷ বরগুনার গরিব-মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি৷ বর্তমানে জেলা প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সভাপতি এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির দায়িত্বে আছেন৷ স্থানীয়ভাবে খেলাধুলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় বিশ্ব অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে তিনি স্বীকৃতিপত্র লাভ করেন৷ শুরু থেকেই বরগুনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তিনি৷ বরগুনার ক্রীড়াঙ্গন আজ যতোটুকু এগিয়েছে তার মূল অনুপ্রেরণায় ছিলেন অ্যাডভোকেট মোঃ বেলায়েত হোসেন৷
বেলায়েত হোসেন বিয়ে করেন ১৯৫৭ সালে৷ পারিবারিক জীবনে তার ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে৷ একমাত্র ছেলে লিয়াকত হোসেন জুয়েল বরগুনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক৷ মেয়েদের মধ্যে দু’জন গৃহিণী, একজন যুগ্ম জেলা জজ ও অন্যজন পুষ্টি প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার৷ বর্তমানে বরগুনার চরকলোনি এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন বেলায়েত হোসেন৷ তবে এক সময়ের কর্মচঞ্চল এ মানুষটি এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ৷ বেশির ভাগ সময় কাটে তার পত্রিকা পড়ে, টেলিভিশন দেখে এবং ধর্মীয় কাজে৷
[উত্সঃ ৬]
Leave a Reply