“Thuggee and the Detecting the nation: fictions of detection and the imperial venture” বইটিতে ক্যারোলিন রিট্জ লিখেছেন – ইংরেজ ডিটেকটিভদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রূপ ব্লিক হাউস বা বেকার স্ট্রীটে পাওয়া যায় নি, পাওয়া গিয়েছিল ভারতবর্ষে। লেখিকার মতে প্রথম ঠগী পুলিশ উইলিয়াম স্লীম্যান-এর (১৭৭০ – ১৮৪০) নেতৃত্বেই পুলিশী কাজে প্রথম গোয়েন্দাকর্ম বা ইন্টেলিজেন্স-এর কাজ শুরু হয়। স্লীম্যান-এর কাহিনীগুলিকে গোয়েন্দাকাহিনী হয়তো বলা যাবে না, কিন্তু ওগুলি গোয়েন্দাগল্পের পূর্বসূরি – সেটা বলা বোধহয় অসঙ্গত নয়।
১৮৬৮ সালে উইল্কি কলিন্সের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা (টি.এস. এলিয়টের মতে এটিই শ্রেষ্ঠ ইংরেজী ডিটেকটিভ গল্প) ‘মুনস্টোন’ -প্রকাশিত হয়। গল্পটি গড়ে উঠেছিল একটি ভারতীয় হীরে-কে কেন্দ্র করে। হীরেটি ছিল মহামূল্য – যার ইতিহাস কিছুটা হোপ ডায়মণ্ডের ইতিহাসের মত। গল্পটি নিয়ে পরে অনেকগুলি নাটক এবং ছায়াছবি বানানো হয়।
ভারতীয়দের গল্পে চরিত্র করতে আর্থার কোনান ডয়েলকেও দেখা যায়। ১৮৯০ সালে ওঁর দ্য সাইন অফ দ্য ফোর-এ শার্লক হোমস চারজন প্রাক্তন ভারতীয় কয়েদীর মুখোমুখী হয়েছেন – লুক্কায়িত ধনরত্ন উদ্ধার-কার্যে। গল্পটি অগোছাল – শার্লক হোমসের স্মরণীয় কীর্তির মধ্যে স্থান পাবে না। কিন্তু এতেই শার্লক হোমসের ড্রাগে আসক্তির কথা প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে।
পাশ্চাত্য ক্রাইম কাহিনীর রণক্ষেত্রকে ভারতবর্ষে প্রথম টেনে আনার কৃতিত্ব হল বোধহয় লরেন্স ব্লকম্যান-এর (১৯০০-১৯৭৫)। ইনি ফোরেন্সিক প্যাথলজির নিয়ে পড়াশুনো করেছিলেন এবং লেখক হিসেবেও যথেষ্ট প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছিলেন। ওঁর লেখা বই – বোম্বে মেল (১৯৩৪), বেঙ্গল ফায়ার(১৯৪৮), ইত্যাদি এক সময়ে জনপ্রিয় হয়েছিল। বোম্বে মেল-এ সব ঘটনাই ঘটেছিলো কলকাতা থেকে ইস্টার্ন রেলওয়ের ট্রেন, বোম্বে মেল-এ মুম্বাই পৌঁছানোর মধ্যে। দুজন লোকের খুন হওয়া এবং ইনস্পেক্টর প্রাইকের খুনীকে গ্রেফতার করা – এটাই ছিলো গল্প ।
ভারতীয় চরিত্র এরপরে আরও অনেক ইংরেজে গোয়েন্দা গল্পে স্থান পেয়েছে। ভারতবর্ষে ঘট্নাও বাদ পড়ে নি। আর একজন বিখ্যাত লেখকের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়। তিনি হলেন এইচ আর এফ কিটিং। কিটিং ভারতবর্ষকে ওঁর গোয়েন্দাকাহিনীর ঘটনাস্থল করেছেন। শুধু তাই নয় – ওঁর ডিটেকটিভও ভারতীয় মারাঠী – ইনস্পেক্টর গণেশ ভি ঘোটে. ১৯৬৪ সালে প্রথম ঘোটে-র কাহিনী প্রকাশিত হয়। কাহিনীটির নাম ছিল দ্য পারফেক্ট মার্ডার। কিটিন-এর গল্পে বলিউডও বাদ যায় নি। ২০০০ সালে ঘোটের শেষ গল্প কিটিং লেখেন। কিন্তু আবার ঘোটেকে ফিরিয়ে আনেন ২০০৮ সালে – ইনস্পেক্টর ঘোটে’স ফার্স্ট কেস – বইয়ে।
ভারতবর্ষকে কেন্দ্র করে ইংরেজি গোয়েন্দাকাহিনী রচনা করার ঐতিহ্য এখনও চলছে। বারবারা ক্লেভারলি-র দ্য লাস্ট কাশ্মিরী রোস প্রকাশিত হয়েছে ২০০১ সালে। কলকাতা থেকে ৫০ মাইল দূরে পানিখাট-এ ক্যাভেলরি অফিসারদের স্ত্রীদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে গল্পটি দানা বেঁধেছে। আসলে পাশ্চাত্য পাঠকদের মিস্টিরিয়াস ভারত সম্পর্কে আগ্রহ আছে। তাই এই বইগুলির চাহিদা থাকবে।
Leave a Reply